ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হওয়ার পেছনে দায়ী যে অভ্যাস
ঘাড় ও পিঠে ব্যথা

ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হওয়ার পেছনে দায়ী যে অভ্যাস

বর্তমান যুগে ঘাড় ও পিঠে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যারা অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, যারা মোবাইল বা ট্যাবলেটে অনেক সময় ব্যয় করেন, অথবা যারা ভারি কাজ করেন, তাদের মধ্যে এই ব্যথা বেশি দেখা যায়। তবে অনেকেই জানেন না, কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসই এই ব্যথার প্রধান কারণ। চলুন জেনে নিই, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হওয়ার পেছনে দায়ী অভ্যাসগুলো কী কী এবং এগুলো থেকে বাঁচার উপায়।


Table of Contents

১. ভুল ভঙ্গিতে বসা (Poor Posture)

আমরা অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে কুঁজো হয়ে বসি বা মাথা ঝুঁকিয়ে রাখি। এই ধরনের ভঙ্গি ঘাড় ও পিঠের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘ সময় এমনভাবে বসে থাকলে পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা শুরু হয়।

সমাধান:

  • সোজা হয়ে বসুন।
  • পিঠে ও ঘাড়ে সাপোর্ট দিন।
  • প্রতি ৩০-৪০ মিনিট পর পর একটু উঠে হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন।

২. দীর্ঘ সময় একটানা বসে থাকা

অনেকেই অফিসে বা বাসায় একটানা ৫-৬ ঘণ্টা বসে থাকেন। এটি পিঠ ও কোমরের পেশিকে দুর্বল করে তোলে এবং ব্যথা সৃষ্টি করে।

সমাধান:

  • প্রতি ঘন্টায় ৫ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস করুন।
  • যদি সম্ভব হয়, দাঁড়িয়ে কাজ করার ব্যবস্থা করুন (standing desk)।
  • মাঝে মাঝে হালকা ব্যায়াম বা স্ট্রেচ করুন।

৩. ভারী ব্যাগ ব্যবহার করা

স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী বা অফিসগামী অনেকেই এক কাঁধে ভারী ব্যাগ বহন করেন। এতে করে ঘাড়ের এক পাশে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং ব্যথা শুরু হয়।

সমাধান:

  • দুই কাঁধে ভারসাম্য রেখে ব্যাগ ব্যবহার করুন (ব্যাকপ্যাক)।
  • অপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে না রাখার চেষ্টা করুন।
  • ব্যাগের ওজন ১০% এর বেশি যেন না হয় শরীরের ওজনের তুলনায়।

৪. মোবাইল ও ট্যাবলেটে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা

‘টেক্সট নেক’ নামে একটি সমস্যা আছে যা মোবাইলের দিকে নিচু হয়ে তাকিয়ে থাকার ফলে হয়। এতে ঘাড়ের পেশি ও স্পাইন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সমাধান:

  • মোবাইল চোখের সমান উচ্চতায় ধরে ব্যবহার করুন।
  • প্রতি ২০ মিনিট পর পর বিরতি নিন।
  • ঘাড় ঘুরিয়ে স্ট্রেচ করুন।

৫. ভুলভাবে ঘুমানো

ঘুমানোর সময় ভুল বালিশ ব্যবহার, অথবা খুব উঁচু বা নিচু বালিশ ব্যবহার করাও ঘাড় ও পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে।

সমাধান:

  • সাপোর্টিভ ও মাঝারি উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করুন।
  • পার্শ্বভঙ্গিতে ঘুমানো উত্তম।
  • খুব বেশি নরম বা শক্ত বিছানায় না ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

৬. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

ঘাড় ও পিঠে ব্যথা

যারা শারীরিকভাবে সক্রিয় না, তারা দীর্ঘদিন পরিশ্রম না করলে পেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং হঠাৎ ভার তুললে পিঠে ব্যথা হয়।

সমাধান:

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন।
  • ইয়োগা বা ফিজিওথেরাপির ব্যায়াম অভ্যাসে পরিণত করুন।

৭. ওজন বেশি হওয়া

অতিরিক্ত ওজন শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে পিঠ ও কোমরের অংশে। ফলে সেখানে ব্যথা দেখা দেয়।

সমাধান:

  • স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
  • পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করুন এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন।

৮. মানসিক চাপ (Stress)

অনেক সময় মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা ঘাড় ও কাঁধের পেশিতে টান সৃষ্টি করে, ফলে ব্যথা শুরু হয়।

সমাধান:

  • মেডিটেশন বা ধ্যান করুন।
  • গভীর নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন।

৯. ভার উত্তোলনের ভুল কৌশল

ঘরদোর পরিষ্কার, বাজারের ব্যাগ তোলা বা জিমে ভার উত্তোলনের সময় ভুল কৌশলে ভার তোলার কারণে পিঠে ব্যথা হয়।

সমাধান:

  • ভার তুলতে গেলে হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন।
  • পিঠ সোজা রাখার চেষ্টা করুন।
  • ভার তোলার আগে নিশ্চিত হোন যে আপনি প্রস্তুত।

১০. পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া

যারা প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমান না, তাদের শরীর ক্লান্ত থাকে এবং পেশিগুলো বিশ্রাম না পাওয়ায় ব্যথা অনুভূত হয়।

সমাধান:

  • প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  • রাতের ঘুম নিয়মিত হোক।
  • ঘুমানোর আগে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার কমান।

ঘাড় ও পিঠের ব্যথা কমাতে ঘরোয়া কিছু উপায়

১. গরম পানির শেক:
গরম পানির ব্যাগ দিয়ে ব্যথার জায়গায় ১০-১৫ মিনিট শেক দিলে আরাম পাওয়া যায়।

২. হালকা তেল মালিশ:
নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে হালকা ভাবে ঘাড় ও পিঠে মালিশ করলে পেশির টান কমে যায়।

৩. আদার রস:
আদা প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আদার রস খাওয়া বা ব্যথার জায়গায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. লেবু ও মধু পানীয়:
ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে।


কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

ঘাড় বা পিঠে ব্যথা যদি–

  • দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে,
  • ব্যথার সাথে হাতে বা পায়ে ঝিনঝিনে অনুভূতি থাকে,
  • চলাফেরায় সমস্যা হয়,
  • ওষুধ বা ঘরোয়া উপায়ে ভালো না হয়,

তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


উপসংহার

ঘাড় ও পিঠে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি নিয়মিত হলে দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। তবে সুস্থ জীবনযাত্রা, সঠিক ভঙ্গি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং কিছু সহজ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যাকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। আপনার অভ্যাসই নির্ধারণ করবে আপনার স্বাস্থ্য কতটা ভালো থাকবে। তাই এখনই সচেতন হোন, ব্যথামুক্ত জীবন উপভোগ করুন।

অবশ্যই! নিচে দেওয়া হলো “ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হওয়ার পেছনে দায়ী যে অভ্যাস” বিষয়ক Top 10 FAQs (Frequently Asked Questions) with Answers যা আপনি আপনার ব্লগ পোস্টে, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাপশনে, বা ইনফোগ্রাফিকে ব্যবহার করতে পারেন:


✅ ১. ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণ কী?

উত্তর:
ভুলভাবে বসা, মোবাইল বেশি ব্যবহার, ভারী ব্যাগ বহন, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া এবং ব্যায়ামের অভাব—এই অভ্যাসগুলো ঘাড় ও পিঠে ব্যথার প্রধান কারণ।


✅ ২. মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে কি?

উত্তর:
হ্যাঁ, মোবাইল নিচু করে অনেকক্ষণ দেখলে “টেক্সট নেক” নামে পরিচিত একটি সমস্যা দেখা দেয়, যা ঘাড়ে ব্যথা সৃষ্টি করে।


✅ ৩. দীর্ঘ সময় একটানা বসে থাকলে কি পিঠে ব্যথা হয়?

উত্তর:
হ্যাঁ, একটানা বসে থাকার ফলে পিঠের পেশিতে চাপ পড়ে, রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং ব্যথা দেখা দেয়।


✅ ৪. ভুল ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো কতটা ক্ষতিকর?

উত্তর:
ভুল ভঙ্গি শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে ঘাড়, পিঠ, এমনকি কোমরে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা হতে পারে।


✅ ৫. ভারী ব্যাগ এক কাঁধে বহন করা কি বিপদজনক?

উত্তর:
হ্যাঁ, এটি ঘাড় ও কাঁধের পেশিতে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে এবং একপাশে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে ব্যথার কারণ হয়।


✅ ৬. ঘাড় ও পিঠের ব্যথা কমাতে কী ধরনের ব্যায়াম করা উচিত?

উত্তর:
নরমাল স্ট্রেচিং, হালকা যোগব্যায়াম (যেমন: ক্যাট-কাউ পোজ, চাইল্ড পোজ), এবং প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা উপকারী।


✅ ৭. ঘুমের অবস্থান কি ঘাড় ও পিঠে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে?

উত্তর:
হ্যাঁ, খুব উঁচু বা নিচু বালিশ, নরম বা অতিরিক্ত শক্ত বিছানায় ঘুমালে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।


✅ ৮. ওজন বেশি হলে কি পিঠে ব্যথা হয়?

উত্তর:
হ্যাঁ, অতিরিক্ত ওজন পিঠ ও কোমরের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যথা অনুভূত হয়।


✅ ৯. কীভাবে বুঝবো আমার অভ্যাসই ব্যথার কারণ?

উত্তর:
যদি ব্যথা নির্দিষ্ট সময়ে (যেমন কাজের পর, ফোন ব্যবহারের পর) বাড়ে, তবে আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসই তার কারণ হতে পারে।


✅ ১০. চিকিৎসকের কাছে কখন যেতে হবে?

উত্তর:
যদি ব্যথা দীর্ঘদিন থাকে, নড়াচড়ায় সমস্যা হয়, হাত-পায়ে ঝিনঝিনে লাগে, বা ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়ে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।


Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *