ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ

ডায়াবেটিস: হঠাৎ বেড়ে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৪৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করছে। এটি মূলত শরীরে ইনসুলিনের অভাব বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে ঘটে। ইনসুলিন হল একটি হরমোন, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসের যদি যথাযথ চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে, এবং এই জটিলতা যদি না সামলানো হয়, তা কখনও কখনও মৃত্যু পর্যন্তও ঘটাতে পারে। তবে, ডায়াবেটিস নিজে থেকে মারাত্মক নয়, এটি মানুষের যত্নহীনতা ও অনিয়মিত জীবনযাত্রার ফল।

ডায়াবেটিসের প্রকার : ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস মূলত তিন ধরনের হতে পারে:

  • টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এটি সাধারণত শৈশব বা কৈশোরে শুরু হয় এবং শরীরের অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া দ্বারা ইনসুলিন উৎপাদনকারী β-cells ধ্বংস হয়ে যায়। তাই টাইপ ১ ডায়াবেটিসে রোগীকে জীবনভর ইনসুলিন নিতে হয়।
  • টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এটি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় এবং এই ধরনের ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়।
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কিছু মহিলার শরীরে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দেয়, যা প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই গুরুতর হতে পারে।

ডায়াবেটিসের কারণ এবং ঝুঁকি

ডায়াবেটিসের একাধিক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে বংশগত কারণ, ওজনের অতিরিক্ত বৃদ্ধি, শারীরিক অকার্যক্ষমতা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপ অন্তর্ভুক্ত। বিশেষত টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবার, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং স্থূলতার মতো জীবনযাত্রার কারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে যখন ইনসুলিনের কার্যকারিতা বা উৎপাদন কমে যায় এবং শরীরে শর্করার মাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি যেমন কিডনি, চোখ, স্নায়ু এবং হৃদযন্ত্রে সমস্যা হতে পারে, যা অকাল মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

ডায়াবেটিসের জটিলতা

ডায়াবেটিসের জটিলতা ধীরে ধীরে তৈরি হয়, তবে এর কিছু জটিলতা দ্রুতই জীবননাশক হয়ে উঠতে পারে। প্রধান জটিলতাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • হৃদরোগ এবং স্ট্রোক: উচ্চ রক্তে শর্করা লেভেল দীর্ঘসময় ধরে থাকার কারণে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। রক্তনালীতে শর্করা জমে গিয়ে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
  • কিডনি সমস্যা: ডায়াবেটিস কিডনির কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে। যদি এটি না নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে কিডনি ফেইলুরের কারণে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে, যা মৃত্যু পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
  • অন্ধত্ব: ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রেটিনায় সমস্যা হতে পারে, যা অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • স্নায়ু ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি): দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ শর্করা স্নায়ু ক্ষতির কারণ হতে পারে, যার ফলে পায়ের অঙ্গহানি বা সংক্রমণ হতে পারে, যা কখনো কখনো মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • সিরামিক কোরনারি রোগ: ডায়াবেটিস শরীরের রক্তনালী এবং হৃদপিণ্ডে সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি।

 ডায়াবেটিসের প্রভাব মৃত্যু

ডায়াবেটিসের প্রভাব দ্রুত ও হঠাৎ বেড়ে গেলে, শরীরের অঙ্গগুলির কার্যকারিতা দ্রুত হ্রাস পেতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তাহলে হাইপারগ্লাইসেমিয়া (যা অত্যধিক রক্ত শর্করা হিসাবে পরিচিত) ঘটতে পারে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ এটি কোমা, অঙ্গ বিকল হতে এবং শেষমেশ মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

আরেকটি পরিস্থিতি হল হাইপোগ্লাইসেমিয়া, যেখানে রক্তের শর্করা অত্যধিক কমে যায়। এটি তীব্রভাবে মাথাব্যথা, অনুনাসিক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে, এবং যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

প্রতিরোধ এবং যত্ন

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে:

  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস: ফল, শাকসবজি, সাদা চাল, চিনির অতিরিক্ত পরিমাণ এড়িয়ে চলা এবং স্বাস্থ্যকর মাংস খাওয়া।
  • শারীরিক পরিশ্রম: নিয়মিত ব্যায়াম এবং হাঁটাচলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা: নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা জরুরি।

ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ হতে পারে, বিশেষত যখন তা অনিয়ন্ত্রিত থাকে এবং সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়। এটি হঠাৎ বেড়ে গিয়ে জীবনহানির কারণও হতে পারে। তাই সঠিক জীবনযাত্রা, ডায়াবেটিসের প্রতি সচেতনতা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *