খাওয়ার সময় সেলফোন ব্যবহার ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। আজ মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অন্তর্নিহিত হয়ে উঠেছে। খাওয়ার সময়ও ফোন হাতে থাকাটা স্বাভাবিক। কেউ হয়ত কামড়ের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া চেক করছে, এবং অন্যরা কাজ শেষ করার জন্য ইমেল পড়ছে। এমনকি টিভির সামনে খাওয়ার সময় ফোন কল শোনা অনেক বাড়িতে সাধারণ।
রেস্তোরাঁর লোকেরা প্রায়শই তাদের খাবারের সাথে ফোনও রাখে। কিন্তু, আপনি কি জানেন খাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবারের সময় আমাদের মস্তিষ্কে একটি নির্দিষ্ট হরমোনের ক্রিয়া ঘটে যা হজমে প্রভাব ফেলে। সেলফোন ব্যবহারে মনোযোগ ব্যাহত হয়, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অধিকন্তু, মোবাইল ব্যবহার করার সময় খাওয়া খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে যার ফলে হয় অতিরিক্ত খাওয়া বা পর্যাপ্ত পরিমাণে না খাওয়া হতে পারে।
খাবারের প্রতি মনোযোগ কমে যাওয়া
আমরা যখন খাবারের সময় আমাদের ফোন ব্যবহার করি, তখন আমরা আমাদের খাবারের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিই না। এই ফোকাসের অভাব আমাদের খাবারের স্বাদ, গন্ধ বা রঙকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারে না। সময়ের সাথে সাথে, এই অভ্যাসটি আমাদের খাবার থেকে সম্পূর্ণ পুষ্টি না পেতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, মোবাইল ডিভাইসে ফোকাস করা তাদের খাবারের অভিজ্ঞতাকে আরও খারাপ করতে পারে – এমনকি স্বাদ বা গন্ধের অভিজ্ঞতা ছাড়াই খাওয়া। এই অভ্যাস তাদের হজম প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে।
চোকিং বা শ্বাসনালিতে খাবার চলে যাওয়ার ঝুঁকি
খাওয়ার সময় আপনার ফোন ব্যবহার করা বা কথা বলা বিপজ্জনক হতে পারে। আমাদের খাদ্য এবং বায়ুপথ একে অপরের পাশে। আপনি খাওয়ার সময় ফোনে থাকলে, খাবার শ্বাসনালীতে শেষ হতে পারে, খাবারের পাইপে নয়। এটি শ্বাসরোধ হতে পারে বা এমনকি জীবন-হুমকি হতে পারে। দ্রুত খাওয়া বা আপনার ফোনে খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া শ্বাসরোধের ঘটনা ঘটাতে পারে।
মাইন্ডফুল ইটিং: খাবার নিয়ে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া
এখন “মাইন্ডফুল ইটিং” বা সচেতনভাবে খাবার খাওয়ার ধারণাটি খুবই জনপ্রিয়। এর মানে হল, খাবার খাওয়ার সময় শুধু খাবারের স্বাদ, গন্ধ ও রংয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, যেন আমাদের শরীর পুষ্টি সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে পারে। মোবাইল ব্যবহার করে খাওয়ার এই প্রক্রিয়াটি একেবারে বিপরীত—এতে খাদ্য গ্রহণের অভিজ্ঞতা ভীষণভাবে নষ্ট হয় এবং পুষ্টি শোষণও বাধাগ্রস্ত হয়।
পেটের সমস্যা:
খাওয়ার সময় আমরা অনেকেই ফোনে চ্যাট করি। কিন্তু, এটি আমাদের হজমের সাথে বিশৃঙ্খলা করতে পারে। এখানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে হবে, সবগুলোই Google দ্বারা যাচাই করা হয়েছে।
- হজমের এনজাইম হ্রাস যখন আমরা খাওয়ার উপর মনোযোগ দিই না, তখন আমাদের পাকস্থলী পর্যাপ্ত পরিপাক এনজাইম তৈরি করে না। এগুলো হজমের চাবিকাঠি। তাই, খাওয়ার সময় যদি আমাদের মনোযোগ অন্য কোথাও থাকে, তাহলে আমাদের মস্তিষ্ক সঠিক সংকেত পাঠায় না এবং এনজাইমের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
- পেটে বাতাস মোবাইলে দ্রুত কথা বলার ফলে প্রচুর বাতাস গিলতে পারে, যার ফলে আমাদের পেটে বাতাস আটকে যেতে পারে। এই অতিরিক্ত বাতাস ফুলে যাওয়া, গ্যাস এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
- মনযোগী খাওয়ার অভাব খাওয়ার প্রতি মনোযোগ না থাকলে, আমরা কতটা খাই তার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। এর ফলে অতিরিক্ত খাওয়া হতে পারে, যার ফলে হজমের সমস্যা এবং ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। মনোযোগ সহকারে খাওয়ার সাথে, আমরা আরও ধীরে ধীরে খাই এবং খাবারকে ভালভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে থাকি, হজম সহজ করে তোলে।
- খাওয়ার সময় মোবাইল থেকে দূরে থাকা এবং খাবারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সহজ এবং আরও স্বাভাবিক করে তুলতে পারে। ভালোভাবে হজম না হলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। সুতরাং, খাওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব
খাবার খাওয়ার সময় যদি একে অপরের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানো যায়, তবে এটি পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত করার একটি বড় সুযোগ। অথচ মোবাইলে মনোযোগ দিয়ে আমরা এই মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে ফেলি। বিশেষ করে পরিবারে, বন্ধুদের সঙ্গে বা অন্যদের উপস্থিতিতে খাবারের সময় মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র আমাদের সম্পর্ক দুর্বল হয়, বরং আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়।
অন্য কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি
খাওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার শুধু হজম ও মনোযোগের সমস্যা সৃষ্টি করে না, এটি অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হজমের প্রক্রিয়াকে বিপরীতভাবে প্রভাবিত করে এবং দীর্ঘকালীন চাপের ফলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ফলে খাওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।
এখনকার পরিপ্রেক্ষিত
আজকাল, মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন ক্লান্তি, চোখের সমস্যা এবং পিঠে ব্যথা হতে পারে। আমরা যদি দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের ফোন ব্যবহার করি, তাহলে এটি আমাদের স্নায়ু এবং মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং খাওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার করা এই প্রক্রিয়াগুলিকে তীব্র করে তোলে, সম্ভাব্য শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, আমরা শুধু খাবারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পুষ্টি নিশ্চিত করছি না, একটি অভ্যাস যা “মাইনফুল ইটিং” নামে পরিচিত। আমরা খাবারের প্রতিও শ্রদ্ধা ও অভ্যাস গড়ে তুলি। তাই খাবারের সময় মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকা জরুরি। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
যাইহোক, খাবারের সময় এর ব্যবহারের কারণে আমাদের সম্ভাব্য শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। এই বিষয়ে সচেতন হওয়া আমাদের স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখার জন্য মন দিয়ে খাওয়া, পরিবারের সাথে সময় কাটানো এবং মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরতি নেওয়া অপরিহার্য।