ত্বক পরিষ্কার করতে সাধারণত সাবান বা ক্লিনজার ব্যবহার করা হয়। বাজারে বহু রং ও ধরনের বাহারি ঘ্রাণের সাবান বা ক্লিনজার পাওয়া যায়। তবে সাবান ও ক্লিনজারে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানগুলো এড়াতে চাইলে আপনি বাড়িতে প্রাকৃতিক উপাদান থেকে পরিষ্কারক তৈরি করে নিতে পারেন। বাইরে থেকে ফিরে অনায়াসেই ত্বক পরিষ্কার করার জন্য এসব পরিষ্কারক ব্যবহার করতে পারবেন। তাতে ধুলা-ময়লার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বক থাকবে সুরক্ষিত। এগুলো অবশ্য সাবানের বার, তরল সাবান বা ক্লিনজারের মতো দেখতে হবে না। তবে ত্বক ঠিকই পরিষ্কার করবে। এ বাবদে খরচও কমানো যাবে।
বেসন (Besan / Gram Flour)
বেসন হল একটি চমৎকার প্রাকৃতিক ক্লিনজার, যা বহু প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে, মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
বেসনের উপকারিতা
ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে
বেসন ত্বকের গভীরে জমে থাকা ধুলাবালি ও অশুদ্ধতা দূর করতে সাহায্য করে। এটি স্কিনের ক্লিনজার হিসেবে দারুণ কাজ করে।
অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে
যাদের ত্বক অয়েলি, তাদের জন্য বেসন একটি প্রাকৃতিক সমাধান। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে স্কিনকে ফ্রেশ রাখে।
প্রাকৃতিক স্ক্রাবার
বেসনের সঙ্গে একটু মধু বা দই মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়।
ব্রণ প্রতিরোধ করে
বেসনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ ব্রণের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বক উজ্জ্বল করে
নিয়মিত ব্যবহারে বেসন ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ও নিখুঁত করে তোলে।
ব্যবহার করার উপায়
সাধারণ ক্লিনজার হিসেবে:
- ১ চামচ বেসন
- ১-২ চামচ গোলাপজল বা কাঁচা দুধ
এগুলো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং মুখে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
স্ক্রাব হিসেবে:
- ১ চামচ বেসন
- ১ চামচ চিনি (মিহি)
- ১ চামচ মধু
একসাথে মিশিয়ে স্কিনে ঘষে লাগান এবং ৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ত্বক উজ্জ্বল করতে ফেস প্যাক:
- ১ চামচ বেসন
- ১ চামচ টক দই
- ১ চিমটি হলুদ
👉 মিশিয়ে মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
⚠সতর্কতা
- বেসন ব্যবহারের আগে মুখ ধুয়ে নিন।
- শুষ্ক ত্বক হলে দুধ বা মধুর সঙ্গে ব্যবহার করুন।
- প্যাচ টেস্ট করে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার ত্বকে অ্যালার্জি হচ্ছে কিনা।
কাঁচা দুধ (Raw Milk)
কাঁচা দুধ শুধু পুষ্টিকর খাবার নয়, বরং এটি একটি প্রাকৃতিক ক্লিনজার ও ত্বকচর্চার অন্যতম সেরা উপাদান। প্রাচীন যুগে রাণীরা ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল রাখতে কাঁচা দুধ ব্যবহার করতেন। এতে থাকে ভিটামিন A, D, B6, ক্যালসিয়াম, ল্যাকটিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
কাঁচা দুধের উপকারিতা
ডিপ ক্লিনজিং করে
কাঁচা দুধ ত্বকের গভীর থেকে ময়লা ও অশুদ্ধতা দূর করে, যা স্কিনকে করে তোলে সতেজ ও পরিষ্কার।
ত্বক নরম ও মসৃণ করে
এর প্রাকৃতিক ফ্যাট ও প্রোটিন ত্বককে হাইড্রেট ও কোমল রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের রং উজ্জ্বল করে
নিয়মিত ব্যবহারে দুধ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ট্যান বা দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।
রোদে পোড়া ত্বক শান্ত করে
দুধের ঠাণ্ডা প্রভাব স্কিনকে শান্ত করে ও সানবার্ন দূর করতে সহায়তা করে।
ব্রণ প্রতিরোধে সাহায্য করে
কাঁচা দুধে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে এবং ব্রণ হওয়া কমায়।
ব্যবহার করার উপায়
সাধারণ ক্লিনজার হিসেবে:
- এক টুকরো তুলো বা কটন বল নিন
- সেটিতে কাঁচা দুধ ডুবিয়ে মুখে আলতো করে মুছুন
৫-১০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
📌 ফেস প্যাক হিসেবে:
- ১ চামচ বেসন
- ১ চামচ কাঁচা দুধ
মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
টোনার হিসেবে:
- ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা দুধ তুলো দিয়ে মুখে লাগান
এটি ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে ও ত্বক টানটান করে।
⚠সতর্কতা
- সংবেদনশীল ত্বক হলে আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন।
- দুধ ব্যবহারের পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন যাতে কোনো অবশিষ্টাংশ না থাকে।
- খুব বেশি সময় রেখে দিলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
মধু (Honey)
মধু শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, বরং এটি একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক উপাদান, যা ত্বকের যত্নে বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও হাইড্রেটিং উপাদান—যা ত্বককে পরিষ্কার, কোমল ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
মধুর উপকারিতা
ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে
মধুতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ ও ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ত্বক হাইড্রেট করে
মধু একটি প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং স্কিনকে নরম রাখে।
ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করে
নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল, দাগহীন ও প্রাণবন্ত।
ব্রণের দাগ হালকা করে
মধু দাগ ও দুশ্চিন্তার চিহ্ন ধীরে ধীরে কমাতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে
মধুর সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে।
ব্যবহার করার উপায়
সাধারণ ক্লিনজার হিসেবে:
- এক চামচ খাঁটি মধু নিন
মুখে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে দিন, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
📌 ব্রণের জন্য স্পট ট্রিটমেন্ট:
- ব্রণের উপর সরাসরি একফোঁটা মধু লাগান
👉 সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন।
ফেস প্যাক:
- ১ চামচ মধু
- ১ চামচ লেবুর রস (তৈলাক্ত ত্বকের জন্য)
👉 মিশিয়ে মুখে লাগান, ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
স্ক্রাব হিসেবে:
- ১ চামচ মধু
- ১ চামচ চিনি
👉 মিশিয়ে মুখে হালকা ঘষে লাগান, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
⚠সতর্কতা
- খাঁটি মধু ব্যবহার করুন, প্রসেসড মধুতে কেমিক্যাল থাকতে পারে।
- সংবেদনশীল ত্বকে আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন।
- লেবুর রস ব্যবহারে সূর্যের আলো এড়িয়ে চলুন।
শসার রস (Cucumber Juice)
শসা শুধু খাবারের জন্য নয়, ত্বকের যত্নেও এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। শসার ৯৫% এর বেশি অংশ পানি, ফলে এটি ত্বককে ঠাণ্ডা, সতেজ ও আর্দ্র রাখতে অসাধারণভাবে কাজ করে। ত্বকের যেকোনো ধরনের জ্বালা, রোদে পোড়াভাব বা ক্লান্তিভাব দূর করতে শসার রস খুবই উপকারী।

শসার রসের উপকারিতা
ত্বক ঠাণ্ডা ও সতেজ রাখে
শসার রস ত্বকে শীতলতা এনে জ্বালাভাব দূর করে, বিশেষ করে সানবার্ন বা রোদে পোড়ার ক্ষেত্রে।
ডার্ক সার্কেল ও পাফিনেস কমায়
চোখের নিচে শসার রস লাগালে কালি ও ফোলা ভাব অনেকটাই কমে যায়।
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে
যাদের ত্বক শুষ্ক, তাদের জন্য শসার রস একটি প্রাকৃতিক হাইড্রেটর হিসেবে কাজ করে।
ত্বক টানটান ও উজ্জ্বল করে
শসার রস রোমকূপ ছোট করতে সাহায্য করে এবং ত্বকে প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে।
ব্রণ ও ফুসকুড়ি কমাতে সাহায্য করে
শসার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ ব্রণের লালচে ভাব ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহার করার উপায়
সাধারণ ক্লিনজার হিসেবে:
- শসা কুঁচি করে জুস বের করুন
- তুলো দিয়ে পুরো মুখে লাগান
১০-১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
📌 চোখের যত্নে:
- তুলায় শসার রস লাগিয়ে চোখের উপর রাখুন
১৫ মিনিট রেখে দিন, আরাম পাবেন।
📌 ফেস প্যাক:
- ২ চামচ শসার রস
- ১ চামচ মধু বা লেবুর রস (ত্বক অনুযায়ী)
মিশিয়ে মুখে লাগান, শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
📌 টোনার হিসেবে:
- শসার রস ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে স্প্রে বোতলে ভরে নিন
প্রতিদিন মুখ ধোয়ার পর স্প্রে করুন।
⚠সতর্কতা
- শসার রস ব্যবহারের আগে মুখ পরিষ্কার করুন।
- সংরক্ষণ করলে ২-৩ দিনের মধ্যে ব্যবহার শেষ করুন।
- যাদের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা আছে, তারা রাতে ব্যবহার এড়িয়ে চলতে পারেন।
শসার রস (Cucumber Juice)
চন্দনের গুঁড়ো বহু যুগ ধরে ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়। এটি ত্বকের জন্য একটি প্রাকৃতিক উপকারী উপাদান, যা ত্বককে উজ্জ্বল, নরম এবং ব্রণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গরমের দিনে এটি ত্বকে শীতলতা এনে দেয় এবং নানা রকম ত্বকের সমস্যা দূর করে।
চন্দনের গুঁড়োর উপকারিতা
ত্বকে শীতলতা আনে
চন্দনের ঠাণ্ডা প্রভাব ত্বকে জ্বালাভাব বা সানবার্ন দূর করতে সাহায্য করে।
ব্রণ ও ফুসকুড়ি কমায়
চন্দনের অ্যান্টিসেপটিক গুণ ব্রণ, ফুসকুড়ি ও চুলকানি কমাতে সহায়ক।
দাগ ও পিগমেন্টেশন হালকা করে
নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের দাগ ও রঙের অসামঞ্জস্য কমে যায়।
ত্বক উজ্জ্বল করে
চন্দন ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে, মুখকে রাখে উজ্জ্বল ও সতেজ।
প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে
এটি মৃত কোষ দূর করে ত্বকের নতুনত্ব ফিরিয়ে আনে।
ব্যবহার করার উপায়
📌 সাধারণ ফেস প্যাক হিসেবে:
- ১ চামচ চন্দনের গুঁড়ো
- ১-২ চামচ গোলাপ জল বা কাঁচা দুধ
পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান, শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
📌 ব্রণের জন্য স্পেশাল প্যাক:
- ১ চামচ চন্দনের গুঁড়ো
- ১ চামচ তুলসী পাতার রস বা নিমপাতার রস
মিশিয়ে মুখে লাগান, ব্রণের উপর বিশেষভাবে ব্যবহার করুন।
ত্বক উজ্জ্বল করতে:
- ১ চামচ চন্দনের গুঁড়ো
- ১ চামচ মধু
👉 প্যাক করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
⚠ সতর্কতা
- খাঁটি ও আসল চন্দনের গুঁড়ো ব্যবহার করুন। বাজারে অনেক ভেজাল চন্দন পাওয়া যায়।
- সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করুন।
- প্রতিদিন ব্যবহার না করে সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করাই ভালো।
নিমপাতা (Neem Leaves)
নিমপাতা একমাত্র প্রাকৃতিক উপাদান যা অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল গুণে ভরপুর। প্রাচীনকাল থেকেই এটি ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্রণ, চুলকানি, র্যাশ কিংবা অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে নিমপাতা অত্যন্ত কার্যকরী।
নিমপাতার উপকারিতা
ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করে
নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, ফলে ব্রণ ও র্যাশ কমে যায়।
ত্বক পরিষ্কার রাখে
নিয়মিত নিম ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার, সতেজ ও দাগমুক্ত থাকে।
রোমকূপ বন্ধ হওয়া রোধ করে
এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে রোমকূপে জমে থাকা ময়লা দূর করে।
চুলকানি ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক
অ্যালার্জি বা সংক্রমণের কারণে হওয়া চুলকানি ও ফুসকুড়িতে নিম অত্যন্ত উপকারী।
ত্বক টোন করে ও উজ্জ্বল করে
নিমপাতা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও স্কিনটোন উন্নত করে।
ব্যবহার করার উপায়
নিমের পেস্ট:
- কিছু তাজা নিমপাতা বেটে পেস্ট তৈরি করুন
মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখুন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
নিমের রস:
- নিমপাতা পানিতে সেদ্ধ করে ছেঁকে রস বের করুন
তুলো দিয়ে মুখে লাগান, এটি একটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করবে।
ব্রণের জন্য স্পেশাল প্যাক:
- ১ চামচ নিমপাতার পেস্ট
- ১ চামচ বেসন বা মুলতানি মাটি
👉 মিশিয়ে মুখে লাগান, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
নিম জল ফেসওয়াশের মতো ব্যবহার:
- ১০-১৫টি নিমপাতা ১ গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে নিন
👉 ঠান্ডা করে প্রতিদিন মুখ ধুয়ে নিন।
⚠️ সতর্কতা
- সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করুন।
- নিমপাতা মুখে ব্যবহারের জন্য ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
- প্রতিদিন ব্যবহার না করে সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
গ্লিসারিন ও গোলাপজল (Glycerin & Rose Water)
গ্লিসারিন ও গোলাপজল—এই দুটি উপাদান একসাথে ত্বকের যত্নে একটি অসাধারণ কম্বিনেশন। গ্লিসারিন একটি প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট (ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে), আর গোলাপজল ত্বককে ঠাণ্ডা রাখে, টোন করে ও সতেজ অনুভূতি দেয়। সাবানের বদলে এই দুই উপাদান ব্যবহারে ত্বক হয় নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল।
গ্লিসারিন ও গোলাপজলের উপকারিতা
ত্বক হাইড্রেটেড রাখে
গ্লিসারিন ত্বকে পানি ধরে রাখে, ফলে ত্বক শুষ্ক হয় না।
ত্বক নরম ও মসৃণ করে
নিয়মিত ব্যবহারে রুক্ষ ও খসখসে ত্বক কোমল ও মসৃণ হয়ে ওঠে।
ত্বক টোন ও রিফ্রেশ করে
গোলাপজল ত্বকের রঙের ভারসাম্য বজায় রাখে ও রিফ্রেশিং ফিল দেয়।
ব্রণ ও ফুসকুড়ি কমায়
গোলাপজলের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ব্রণের লালভাব ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে একটি প্রাকৃতিক গ্লো আসে।
ব্যবহার করার উপায়
সাধারণ টোনার হিসেবে:
- ১ চামচ গ্লিসারিন
- ২-৩ চামচ গোলাপজল
ভালোভাবে মিশিয়ে বোতলে ভরে সংরক্ষণ করুন। প্রতিদিন মুখ ধোয়ার পর তুলো দিয়ে লাগান।
নাইট সিরাম:
- ১ চামচ গ্লিসারিন
- ১ চামচ গোলাপজল
👉 রাতে ঘুমানোর আগে মুখে লাগান, এটি সারারাত ত্বককে হাইড্রেট রাখবে।
ফেস প্যাকের সাথে মেশানো:
- যেকোনো ফেস প্যাক বা ফেস মাস্কে গোলাপজলের সঙ্গে কিছু গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
ঠোঁট ফাটা রোধে:
- গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান
👉 এটি ঠোঁট নরম রাখে ও ফাটা ঠোঁট ঠিক করে।
⚠সতর্কতা
- গ্লিসারিন একটু ঘন ও স্টিকি হতে পারে, তাই পরিমাণ বেশি না নেয়াই ভালো।
- সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করুন।
- ঘামার সময় দিনে ব্যবহার করলে একটু অস্বস্তি হতে পারে, তাই রাতে ব্যবহার বেশি উপযুক্ত।
১০টি প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত উত্তর নিচে দেওয়া হলো:
১. সাবানের বদলে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার কেন ভালো?
সাবানে থাকা রাসায়নিক উপাদান ত্বক শুষ্ক ও সংবেদনশীল করতে পারে। প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে কোমলতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
২. কোন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা যায়?
বেসন, কাঁচা দুধ, মধু, শসার রস, চন্দনের গুঁড়ো, নিমপাতা, গ্লিসারিন ও গোলাপজল ইত্যাদি উপাদান ত্বক পরিষ্কারে কার্যকর।
৩. ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপাদান নির্বাচন কীভাবে করব?
- তৈলাক্ত ত্বক: লেবুর রস, বেসন, শসার রস।
- শুষ্ক ত্বক: মধু, গ্লিসারিন, কাঁচা দুধ।
- সংবেদনশীল ত্বক: গোলাপজল, চন্দনের গুঁড়ো, নিমপাতা।
৪. প্রাকৃতিক ক্লিনজার কতদিন সংরক্ষণ করা যায়?
গোলাপজল, গ্লিসারিন ও লেবুর রসের মিশ্রণ ফ্রিজে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।
৫. প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বক কতবার পরিষ্কার করা উচিত?
দিনে ১-২ বার, বিশেষ করে বাইরে থেকে ফিরে ত্বক পরিষ্কার করা উচিত। অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল হ্রাস করতে পারে।
৬. প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ব্রণ কমানো যায় কি?
হ্যাঁ, নিমপাতা, চন্দনের গুঁড়ো ও মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
৭. প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো যায় কি?
নিয়মিত ব্যবহারে মধু, চন্দনের গুঁড়ো ও গোলাপজল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
৮. প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কীভাবে নেব?
বেসন ও লেবুর রসের মিশ্রণ ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে ও রোমকূপ ছোট করে।
৯. প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরিকৃত ক্লিনজার ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
সাধারণত নেই, তবে সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করা উচিত।
১০. প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বকের দাগ দূর করা যায় কি?
মধু, চন্দনের গুঁড়ো ও নিমপাতা নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের দাগ হালকা হয়।
Pingback: গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে শিশুর যত্ন ও খাদ্যতালিকা কেমন হওয়া উচিত ?