ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকাতে যা করতে হবে

ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকাতে যা করতে হবে

ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের আক্রমণ একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যা, যা ত্বকসহ শরীরের অন্যান্য অংশে হতে পারে। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে, এবং বিভিন্ন মাধ্যমে দ্রুত ছড়াতে পারে, যেমন- সংক্রামিত ত্বক, পরিবেশ, এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এই ধরনের সংক্রমণটি সাধারণত উষ্ণ, স্যাঁতসেঁতে এবং ঘর্মাক্ত পরিবেশে দ্রুত বাড়ে। এজন্য, ফাঙ্গাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ কীভাবে ছড়ায়?

ফাঙ্গাস বা ছত্রাক সাধারণত স্পোর বা কণার মাধ্যমে ছড়ায়। ছত্রাকের স্পোর খুবই হালকা এবং বাতাসে ভাসতে পারে, যা সহজেই ত্বক বা চুলের মাধ্যমে অন্যের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি যদি চুলে বা ত্বকে ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হন, তবে এটি শারীরিক সংস্পর্শে পড়ে অন্যের শরীরে পৌঁছাতে পারে। ঘর্মাক্ত ত্বক, গরম এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছত্রাকের বৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। পাবলিক সুইমিং পুল, জিম বা শাওয়ার রুমে যেখানে অন্যের সঙ্গে শরীরের সরাসরি যোগাযোগ হয়, সেইসব স্থানে এই ছত্রাক দ্রুত ছড়াতে পারে।

এছাড়াও, নোংরা বা অপরিষ্কার ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন তোয়ালে, জামাকাপড়, বিছানার চাদর, চিরুনি এবং জুতো দিয়ে ছত্রাক ছড়ানো হতে পারে। যাদের ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব থাকে, তারা সহজেই ফাঙ্গাসের ঝুঁকিতে পড়েন। এটি সবার কাছে সতর্কতার বিষয় যে, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন তোয়ালে, চিরুনি, এবং জামাকাপড় কখনোই অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়।

ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকাতে যা করতে হবে

ফাঙ্গাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:

  • ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ভাগাভাগি করবেন না 
  •    কখনোই অন্যদের সঙ্গে আপনার তোয়ালে, জামাকাপড়, জুতো, চিরুনি বা বেড শিট শেয়ার করবেন না।
  • ত্বক শুকনো রাখুন 
  •    ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি সাধারণত ঘর্মাক্ত এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বাড়ে, তাই শরীরের ত্বক শুকনো রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের ভেজা অংশ যেমন, হাত, পা এবং অন্যান্য স্থানের ভেজা ভাব শুষ্ক রাখতে হবে।
  • পাবলিক স্থানগুলিতে সতর্ক থাকুন 
  •    পাবলিক সুইমিং পুল, শাওয়ার বা জিমে ব্যক্তিগত স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। এসব স্থানগুলোতে ফাঙ্গাস দ্রুত ছড়ায়, সুতরাং নিজের স্যান্ডেল পরা উচিত।
  • আক্রান্ত স্থানে হাত দেবেন না 
  •    ফাঙ্গাস আক্রান্ত ত্বকে কখনোই হাত দেবেন না। এর ফলে আপনার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়াতে পারে।
  • বৈষম্য ও অপরিচ্ছন্নতা এড়ান 
  •    ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। নিয়মিত গোসল করুন এবং শরীরের সব অংশ পরিষ্কার রাখুন।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফাঙ্গাস নিয়ন্ত্রণের উপায়

ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ অনেক সময় ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এখানে কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করতে পারে:

  • নারকেল তেল ও টি ট্রি অয়েল 

   নারকেল তেলে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। টি ট্রি অয়েল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ছত্রাকের বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক। এটি দিনে দুইবার ব্যবহার করতে হবে।

  • অ্যালোভেরা জেল 

   অ্যালোভেরা জেলও ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি ভালো উপায়। এটি ত্বককে ঠান্ডা রাখে এবং সংক্রমণ প্রশমিত করে। আক্রান্ত স্থানে সরাসরি এটি ব্যবহার করতে হবে।

  • লবঙ্গ তেল 

   লবঙ্গ তেলও একটি কার্যকরী অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। এটি ছত্রাকের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে এবং সংক্রমিত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে।

  • সিদ্ধার্থ তেল 

   সিদ্ধার্থ তেলও একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের ফাঙ্গাস সংক্রমণ কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

 উপসংহার : ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ একটি বিরক্তিকর সমস্যা হলেও সঠিক যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ পরিষ্কার রাখা এবং ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে সংক্রমণ কমাতে সহায়ক হবে। তবে, গুরুতর সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *