ভূমিকা – কেন চুলকানি শিশুদের মাঝে সাধারণ সমস্যা
শিশুর ত্বক প্রাকৃতিকভাবে অনেক বেশি নরম ও সংবেদনশীল। তাই গরম আবহাওয়া, ঘাম, ধুলাবালি, এমনকি নতুন কোনো খাবার খাওয়ার পরও তাদের শরীরে চুলকানি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় আমরা ভাবি, এটা হালকা সমস্যা, কিন্তু সত্যি বলতে, শিশুর অস্বস্তি ও কান্নার অন্যতম কারণ হতে পারে এই চুলকানি।
আমি নিজেই আমার ছেলের ক্ষেত্রে দেখেছি—গরমকালে তার ঘাড় ও পিঠে ছোট ছোট র্যাশ উঠতো। শুরুতে বুঝিনি, পরে জানলাম, ধুলাবালির সঙ্গে ঘাম মিশে এই সমস্যা সৃষ্টি করছে। তখন থেকেই আমি প্রাকৃতিক কিছু উপায় বেছে নিয়েছি—যা ছিল নিরাপদ, সহজ, এবং কার্যকর।
অভিভাবক হিসেবে আমরা চাই সন্তানের যেন আরাম থাকে। তাই ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসাই হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ, যা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আরাম দেয়। এই গাইডে আমি ঠিক তা-ই শেয়ার করেছি—আপনার সন্তানের যত্নের জন্য।
বাচ্চাদের চুলকানির সাধারণ কারণ
বাচ্চাদের সারা গায়ে চুলকানি হওয়া একেবারে অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এটি উপেক্ষা করলে শিশুর ঘুম, মনোযোগ, এমনকি খাবার খাওয়ার অভ্যাস পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চলুন সহজভাবে দেখি, ২০২৫ সালের বাস্তবতা অনুযায়ী—বাচ্চাদের চুলকানির সবচেয়ে সাধারণ কিছু কারণ।
মশার কামড়
বাংলাদেশের মতো গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় মশা অনেক বেশি হয়। শিশুর কোমল ত্বকে মশার কামড় খুব সহজেই র্যাশ ও চুলকানি তৈরি করে। আমি নিজের সন্তানের ক্ষেত্রে দেখেছি—রাতে মশারি ছাড়া ঘুমালে সকালে গায়ে লাল দাগ আর চুলকানি হতেই থাকত। নিয়মিত মশারি ব্যবহার এবং মশা প্রতিরোধক লোশন ব্যবহার অনেকটাই সমস্যা কমায়।
গরমে ঘাম বসা
গরমে বাচ্চারা বেশি ঘামে। সেই ঘাম যদি ঠিকমতো শুকিয়ে না যায়, তাহলে ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, যা “ঘাম বসা” নামে পরিচিত। ফলে ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ও তীব্র চুলকানি দেখা দেয়।
এলার্জি
ধুলাবালি, পোষা প্রাণী, কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী এমনকি নির্দিষ্ট খাবারের প্রতিও অনেক শিশুর এলার্জি থাকে। এলার্জির কারণে হঠাৎ করেই শরীরে লালচে চুলকানি শুরু হয়।
খাদ্য সংবেদনশীলতা
চিংড়ি, ডিম, গরুর দুধ বা চকোলেট খাওয়ার পর অনেকে চুলকানিতে ভোগে। এটি শরীরের প্রতিক্রিয়া মাত্র, তবে শিশুর ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হয়। নতুন খাবার দেওয়ার সময় অবশ্যই পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত।
ধুলাবালি ও গন্ধ
অনেক সময় পুরাতন কাপড়, বিছানার চাদর, কিংবা শক্তিশালী পারফিউম থেকেও শিশুর ত্বকে চুলকানি হতে পারে। আমি তাই সবসময় আমার বাচ্চার পোশাক আলাদা ধুয়ে রাখি এবং সুগন্ধি পণ্যে খুব সীমিত ব্যবহার করি।
উপসংহারে বলবো, চুলকানি সাধারণ হলেও এর পেছনে কারণগুলো ঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারলে সমস্যার সমাধান সহজ হয়। প্রতিদিনের একটু নজরদারিই আপনার শিশুকে অনেকটা আরাম দিতে পারে।
এলার্জি জনিত চুলকানি ও তার ঘরোয়া প্রতিকার
শিশুরা অনেক সময় এমন কিছু জিনিসের সংস্পর্শে আসে, যেগুলোর প্রতি তাদের শরীরে সহ্যক্ষমতা কম। এর ফলেই তৈরি হয় এলার্জি। এলার্জি জনিত চুলকানিতে বাচ্চার গায়ে ছোট ছোট র্যাশ, লালচে দাগ, ফোলাভাব কিংবা তীব্র চুলকানি দেখা দিতে পারে। এই চুলকানি বেশিরভাগ সময় হঠাৎ করে শুরু হয় এবং যদি ঠিকমতো যত্ন না নেওয়া হয়, তবে আরও খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে।
ঠান্ডা পানির সেঁক
চুলকানির জায়গায় নরম তোয়ালে ভিজিয়ে ঠান্ডা পানির সেঁক দিলে তাৎক্ষণিক আরাম মেলে। এটি চুলকানির তীব্রতা কমায় ও ফোলাভাব হ্রাস করে।
বেসন ও দইয়ের প্যাক
১ চামচ বেসন ও ১ চামচ দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এটি ত্বক ঠান্ডা করে ও প্রদাহ কমায়। আমি আমার মেয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছি, এবং মাত্র দু’দিনেই অনেক স্বস্তি পেয়েছি।
তুলসি ও নিমপাতার ব্যবহার
তুলসি ও নিমপাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে বাচ্চাকে গোসল করানো একটি দারুণ ঘরোয়া উপায়। এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ থাকে, যা চুলকানির মূল কারণগুলো নির্মূল করে।
মনে রাখবেন, যদি চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ফুলে ওঠে, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র:
- মেডলাইফ হেলথ (২০২৫ রিপোর্ট)
- বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শিশু স্বাস্থ্যবিষয়ক পুস্তিকা (আপডেট: ২০২৪)

বাচ্চাদের চুলকানির ঘরোয়া চিকিৎসা – কার্যকর সমাধান
যদি আপনি আমার মতো একজন অভিভাবক হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই জানেন—বাচ্চারা যখন সারাক্ষণ গা চুলকাতে থাকে, তখন তাদের অস্বস্তি বোঝা যায় চোখেমুখেই। আমি নিজের ছেলের চুলকানির সমস্যা সমাধানে অনেক কিছু চেষ্টা করেছি, কিন্তু সঠিক ঘরোয়া প্রতিকারই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে। নিচে আমি যেসব পদ্ধতি নিয়মিত ব্যবহার করি, সেগুলোই তুলে ধরছি।
নারকেল তেল ও কর্পূর
নারকেল তেল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে, আর কর্পূর একটি প্রাকৃতিক ঠান্ডা অনুভূতি দেয়। আমি ২ চামচ নারকেল তেলে এক চিমটি কর্পূর মিশিয়ে হালকা গরম করে আক্রান্ত স্থানে দিনে দুইবার ব্যবহার করি। এটি ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি দুটোই কমায়।
অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা ত্বকে ঠান্ডা প্রভাব ফেলে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বাচ্চাদের জন্য বাজারের রাসায়নিক-মুক্ত অ্যালোভেরা জেল বা গাছের পাতা থেকে সরাসরি জেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি দিনে ২–৩ বার প্রয়োগ করলে বেশ ফল পাওয়া যায়।
ওটমিল বাথ (Oatmeal bath)
চুলকানি দূর করতে ওটমিল বাথ সত্যিই কার্যকর। আমি এক কাপ পাতলা গুঁড়ো ওটস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে ছেলেকে ১০-১৫ মিনিট বসিয়ে রাখি। এরপর স্বাভাবিক পানিতে ধুয়ে দেই। এতে চুলকানি অনেকটাই কমে যায়। (সূত্র: Mayo Clinic, 2025)
নিমপাতা সেদ্ধ পানিতে গোসল
নিম অ্যান্টিসেপ্টিক। কয়েকটি নিমপাতা সেদ্ধ করে সেই পানি ঠান্ডা করে বাচ্চাকে গোসল করানো হলে চুলকানির জীবাণু দমন হয়। আমি সপ্তাহে অন্তত ২ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করি।
সতর্কতা:
- সবকিছু আগে সামান্য অংশে প্যাচ টেস্ট করে নিন।
- ত্বকে ফোসকা বা রক্ত বের হলে ঘরোয়া প্রতিকার বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- শিশুদের কখনোই কর্পূর বেশি ব্যবহার করবেন না – খুব সামান্যই যথেষ্ট।
তথ্যসূত্র:
- Mayo Clinic (2025 Updated Recommendations)
- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ (শিশু স্বাস্থ্য নির্দেশিকা ২০২৪)
- পারিবারিক অভিজ্ঞতা (নিজের ছেলে-মেয়ের ওপর প্রয়োগ করা কার্যকর পদ্ধতি)
বাচ্চাদের চুলকানির জন্য উপযুক্ত ঘরোয়া সাবান
বাচ্চাদের ত্বক খুবই নরম ও সংবেদনশীল। তাই চুলকানির সময় সাধারণ সাবান ব্যবহার করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। আমি নিজের সন্তানের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, সঠিক উপাদান দিয়ে তৈরি সাবান ব্যবহারে ত্বকের জ্বালা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
কোন উপাদানগুলো চুলকানির জন্য সহায়ক?
- নিম: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণসম্পন্ন
- চন্দন: ত্বক ঠান্ডা রাখে
- গ্লিসারিন: প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, ত্বক শুষ্ক হতে দেয় না
শিশুবান্ধব সাবান (ব্র্যান্ড-নিরপেক্ষ পরামর্শ)
বাজারে এমন অনেক সাবান পাওয়া যায়, যেগুলো প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, পারাবেন ও সালফেটমুক্ত, এবং pH-ব্যালান্সড। সাবান প্যাকেজে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন:
- “Baby safe” বা “Dermatologist-tested” লেখা আছে কি না
- চুলকানির জন্য উপযোগী উপাদান আছে কি না
ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি:
- গরম পানি নয়, হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন
- সাবান সরাসরি ঘষে না দিয়ে হাতে ফেনা করে ব্যবহার করুন
- প্রতিদিন একবারের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো
ব্যক্তিগত টিপস:
আমি সপ্তাহে ২-৩ দিন নিম-চন্দন সাবান ব্যবহার করি এবং বাকি দিনে শুধু পানিতে গোসল করিয়ে নিই। এতে ত্বক বিশ্রাম পায় এবং চুলকানিও কমে।
তথ্যসূত্র:
- বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন (২০২৫ নির্দেশিকা)
- Mayo Clinic Baby Skincare Guidelines (২০২৫)

বাচ্চাদের চুলকানির জন্য উপযুক্ত ক্রিম বা লোশন
বাচ্চাদের ত্বকে চুলকানি হলে শুধুমাত্র সাবান বা পানি যথেষ্ট নয়—একটা সঠিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করলে আরাম দ্রুত আসে। আমি নিজে আমার মেয়ের ত্বকে সমস্যার সময় কিছু নির্ভরযোগ্য প্রোডাক্ট ব্যবহার করেছি, যা সত্যিই কার্যকর ছিল।
কোন উপাদানগুলো নিরাপদ ও কার্যকর?
- ক্যালামাইন লোশন: চুলকানি কমায়, শীতলতা দেয়
- অ্যালোভেরা জেল: প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ঠান্ডা রাখে
- ১% হাইড্রোকর্টিসন: ডাক্তার পরামর্শ দিলে সাময়িক প্রয়োগ করা যায় (এটি অ্যালার্জি বা র্যাশে কার্যকর)
কখন এবং কীভাবে প্রয়োগ করবেন?
- চুলকানির জায়গায় পরিষ্কার ও শুকনো ত্বকে প্রয়োগ করুন
- দিনে ২ বার পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়
- যদি ত্বকে ফুসকুড়ি বা লালচে ভাব বাড়ে, অবশ্যই চিকিৎসক দেখান
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:
আমার সন্তান একবার গরমে চুলকানিতে খুব কষ্টে ছিল। ডাক্তার ক্যালামাইন লোশন পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রতিদিন গোসলের পর সামান্য করে লাগাতাম, এবং ৩-৪ দিনের মধ্যে স্পষ্ট উন্নতি দেখি।
তথ্যসূত্র:
- বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন ২০২৫ গাইডলাইন
- Mayo Clinic (Pediatric Dermatitis Recommendations ২০২৫)
চুলকানি দূর করার ঔষধের নাম ও ব্যবহার
চুলকানি শুধু অস্বস্তির বিষয় নয়—কখনো কখনো এটি অ্যালার্জি, একজিমা বা কোনো আভ্যন্তরীণ সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই প্রেসক্রিপশন ছাড়া মনের মতো ওষুধ খাওয়াটা বিপজ্জনক।
চিকিৎসকরা সাধারণত যেসব ওষুধ পরামর্শ দেন:
- সিটিরিজিন (Cetirizine)
দিনে একবার খাওয়া যায়। এটি অ্যালার্জিজনিত চুলকানিতে খুব কার্যকর। শিশুর জন্য সিরাপ ও বড়দের জন্য ট্যাবলেট আছে। - লোরাটাডিন (Loratadine)
এটি তুলনামূলকভাবে কম ঘুম আনে। দিনে একবার খাওয়াই যথেষ্ট। - ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine)
দীর্ঘমেয়াদি চুলকানিতে কার্যকর এবং ঘুমভাব কম। - ডেসলোরাটাডিন (Desloratadine)
অ্যালার্জি সংবেদনশীল শিশুদের জন্য বিশেষভাবে নির্ভরযোগ্য।
তবে গর্ভবতী নারী, শিশুর বয়স ২ বছরের নিচে, এবং দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
- চুলকানি যদি এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়
- ত্বকে র্যাশ, ফুসকুড়ি বা ফোস্কা দেখা দেয়
- ঘন ঘন অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে
- চুলকানি সঙ্গে জ্বর বা হাঁপানির উপসর্গ থাকলে
ওষুধ ব্যবহারের সতর্কতা:
- কখনই ওষুধ নিজের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন বা বন্ধ করবেন না
- একসাথে একাধিক অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করবেন না
- ঘুমভাব বা মাথা ঝিমঝিম করলে গাড়ি চালানো বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:
আমার ছোট ভাই একবার গরমকালে চুলকানিতে ভুগছিল। ডাক্তারের পরামর্শে সিটিরিজিন সিরাপ শুরু করি। ৩ দিনের মধ্যে অস্বস্তি কমে আসে, এবং আর চুলকানি ছিল না।
তথ্যসূত্র:
- বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) চর্মরোগ নির্দেশিকা ২০২৫
- Mayo Clinic Guidelines on Pediatric Antihistamines (২০২৫)
- www.drugs.com/safety (প্রথমিক ড্রাগ রেফারেন্স)
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
যদি আপনার সন্তানের চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বারবার ফিরে আসে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। অনেক সময় সাধারণ চুলকানি মনে হলেও এর পেছনে থাকতে পারে একজিমা, ছত্রাক, বা স্ক্যাবিসের মতো চর্মরোগ।
বিশেষ করে যদি চুলকানির সঙ্গে র্যাশ, জ্বর, পুঁজ বা রক্ত দেখা দেয় – তাহলে এটি হতে পারে সংক্রমণের লক্ষণ।
আরও খেয়াল রাখতে হবে, চুলকানির কারণে যদি বাচ্চা রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়, ক্ষত তৈরি করে বা অস্বস্তিতে পড়ে, সেটাও একটি পরিষ্কার সংকেত যে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।
আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত রাখতে নিজে অনুমান না করে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
তথ্যসূত্র:
- বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (২০২৫ গাইডলাইন)
- Mayo Clinic: Pediatric Skin Itching Overview
- ডা. আফরোজা ইসলাম, শিশু চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা

প্রতিদিনের যত্ন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
আমার সন্তানের চুলকানির অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি—প্রতিরোধই হলো সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। প্রতিদিন নিয়ম করে গোসল করানো, জামাকাপড় পরিষ্কার রাখা এবং বাচ্চাকে ঘাম ও ধুলাবালি থেকে দূরে রাখা খুবই জরুরি।
বাংলাদেশের গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় চুলকানি সহজেই বাড়ে, তাই দিনের বেলা বিশেষ করে স্কুল থেকে ফেরার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে দেয়া উচিত।
ঘরবাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং বিছানার চাদর ও তোয়ালে প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন্তত দু’বার ধুয়ে ফেলুন।
খাদ্য তালিকায় খুব বেশি প্রক্রিয়াজাত বা অ্যালার্জিজনক খাবার (যেমন চিংড়ি, ডিম বা গরুর দুধ) খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন, বিশেষত যদি চর্মরোগের ইতিহাস থাকে।
তথ্যসূত্র:
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শিশু চর্মরোগ ইউনিট (২০২৫)
- Mayo Clinic: Child Skin Care Prevention Guide
- ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ
ঘরোয়া চিকিৎসার সময় সচেতনতা ও ভুল ধারণা
আমার সন্তানের চুলকানি কমাতে প্রথমে আমি ইউটিউবে দেখা কিছু ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করেছিলাম—যেমন নিমপাতার পেস্ট, কাঁচা হলুদ বা লবণের পানি। কিন্তু কিছুতেই আরাম পাচ্ছিল না, বরং ত্বক আরও লাল হয়ে উঠছিল।
বাচ্চাদের ত্বক বড়দের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাই যেকোনো ঘরোয়া উপাদান প্রয়োগের আগে প্যাচ টেস্ট করা জরুরি—হাতের কোনো এক কোণে দিয়ে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। যদি কোনো জ্বালা, লালচে ভাব বা ফোলা দেখা দেয়, তাহলে সেটি ব্যবহার না করাই ভালো।
আরেকটি বড় ভুল হলো একাধিক টোটকা একসাথে প্রয়োগ করা, যা ত্বকের স্বাভাবিক সুরক্ষাবলিকে নষ্ট করতে পারে।
তথ্যসূত্র:
- শিশু চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আফরোজা ইসলাম, ২০২৫
- Mayo Clinic: Home Remedies for Children – Risks and Guidelines
- ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
উপসংহার: ভালোবাসা ও যত্নই শিশুর সুস্থতার মূল চাবিকাঠি
আমার সন্তান যখন চুলকানিতে অস্থির হয়ে পড়েছিল, তখন বুঝেছি—শুধু ওষুধ নয়, সবচেয়ে জরুরি ছিল আমার সময়, ভালোবাসা আর ধৈর্য।
ঘরোয়া চিকিৎসা অনেক সময় কার্যকর হতে পারে, তবে সতর্কতা ও সঠিক জ্ঞান না থাকলে বিপরীত ফল আসতে পারে। সবসময় প্রাকৃতিক উপায়ে ধৈর্যের সাথে সমস্যা মোকাবেলা করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
সন্তানের সুস্থতার জন্য তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিন, গুজব নয়। মনে রাখবেন, একটি সচেতন সিদ্ধান্তই আপনার সন্তানের হাসির মূল হতে পারে।
তথ্যসূত্র:
- বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন, ২০২৫
- UNICEF Parenting Guide (2024)
- বাস্তব অভিজ্ঞতা ও শিশু চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ