মাস্ক কি এখনো ব্যবহার করা প্রয়োজন:

মাস্ক কি এখনো ব্যবহার করা প্রয়োজন: করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত দিক

মাস্ক কি এখনো ব্যবহার করা জরুরি.করোনা : মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা: করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত দিক

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিষয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম অভ্যাস হলো মাস্ক ব্যবহার। যদিও করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে এখনও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এবং এর উপকারিতা নিয়ে আলোচনা চলছেই। বিশেষ করে ধুলাবালু, এলার্জি, এবং কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিরসনে মাস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

 মাস্কের ব্যবহার: কি উপকারিতা?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষেরা মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন। মূলত, মাস্ক মানুষের মধ্যে সর্দি, কাশি বা অন্য কোনো শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। করোনা মহামারির পর মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস অনেক দেশে স্থায়ী হয়ে গেছে। তবে সাধারণ মানুষ যেসব মাস্ক ব্যবহার করে থাকেন, যেমন সার্জিক্যাল মাস্ক বা কাপড়ের মাস্ক, সেগুলো রোগজীবাণু থেকে পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারে না। এই মাস্কগুলো ছোট জীবাণু বা ভাইরাসগুলো আটকানোর ক্ষেত্রে কার্যকর নয়, কারণ মাস্কে যে ছিদ্র থাকে, তা জীবাণুর আকারের চেয়ে বড়।

তবে মাস্ক কিছুটা রক্ষা করতে পারে। বিশেষ করে যাদের ধুলাবালু বা অ্যালার্জি সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই মাস্ক কিছুটা উপকারী। রাস্তার ধুলাবালু এবং অন্যান্য দূষণের ক্ষতিকর কণা থেকে কিছুটা সুরক্ষা পাওয়ার জন্য এই মাস্কগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

আদর্শ মাস্কের বৈশিষ্ট্য

একটি আদর্শ মাস্ক সাধারণত পাঁচটি স্তরবিশিষ্ট হয়ে থাকে। এর মধ্যে মেল্টব্লোন স্তর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যেটি ছোট ছোট কণাকে আটকাতে সাহায্য করে। তবে আমাদের দেশে অনেক সার্জিক্যাল মাস্কেই এই স্তরটি অনুপস্থিত থাকে, যা মাস্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। মাস্ক কেনার সময়, এটি পরীক্ষা করে দেখা উচিত, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি যথাযথ মানসম্পন্ন এবং নিরাপদ।

মাস্ক ব্যবহারের সময় কিসে নিষেধ:

মাস্ক ব্যবহারের জন্য কিছু সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে, যা সবাইকে মেনে চলা উচিত। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা হলো:

  • বাড়ির ভেতরে মাস্ক ব্যবহার করা: যদি ঘরের পরিবেশে কোনো রোগী না থাকে এবং সবাই সুস্থ থাকে, তাহলে বাড়ির ভেতরে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজনীয় নয়।
  • একটি মাস্ক দীর্ঘসময় ব্যবহার করা: সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণত ৩-৪ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায়। এর বেশি সময় ব্যবহার করলে মাস্কের কার্যকারিতা কমে যায় এবং এটি জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া ধারণ করতে পারে।
  • মাস্ক পুনঃব্যবহার করা: একবার ব্যবহৃত মাস্ক পুনরায় ব্যবহার না করাই ভালো। এটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
  • মাস্ক ভিজে গেলে ব্যবহার করা: যদি মাস্ক ভিজে যায়, সেটা পুনরায় ব্যবহার করা উচিত নয়। ভিজে মাস্ক শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি আরও জীবাণু ধারণ করতে পারে।
  • মুখে কোনো রোগ বা চামড়ার সমস্যা হলে মাস্ক ব্যবহার না করা: যদি মুখে কোনো সংক্রমণ বা চামড়ার সমস্যা থাকে, তবে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

কখন মাস্ক ব্যবহার করা আবশ্যক?

এখনও কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষত, চিকিৎসক, হাসপাতালের কর্মী এবং যারা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগী দেখতে যান, তাদের জন্য মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, যারা ধুলাবালু বা গুঁড়া জাতীয় উপাদান (যেমন আটা, মরিচ, ধনে) নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য বিশেষ মাস্ক পরা আবশ্যক। এই ধরনের পেশায় মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

মাস্ক ব্যবহারের পরিস্থিতি: দেশভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা ভিন্ন। জাপান, যেমনটি ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে শহরে ৫৭.৯% মানুষ এবং গ্রামে ৯.৩% মানুষ নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করেন। জাপানে মাস্ক ব্যবহারের হার বেশি হলেও, ২০২২ সালে তারা এটি প্রায় ১১% কমিয়েছে। এর কারণ হলো, তারা দূষণ কমানোর দিকে মনোযোগী হয়েছে। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে তারা তাদের মাস্ক ব্যবহারের মাত্রা কিছুটা কমিয়েছে, কারণ তারা মনে করে যে দূষণের বিরুদ্ধে অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা বেশি কার্যকরী।

মাস্ক ব্যবহার এখনো কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, মাস্ক ব্যবহারের কার্যকারিতা এবং সঠিক উপকরণের নির্বাচন সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্র, ধুলাবালু বা অ্যালার্জি সমস্যার জন্য মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। মাস্ক ব্যবহারের সময় নিয়মাবলী অনুসরণ করা, সঠিক মানের মাস্ক ব্যবহার এবং অতিরিক্ত সময় পরিধান থেকে বিরত থাকা উচিত।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *