শিশু মুনতাহার গলায় ছিল রশি পেঁচানো, মরদেহ মিলল পুকুরে

শিশু মুনতাহার গলায় ছিল রশি পেঁচানো, মরদেহ মিলল পুকুরে

শিশু মুনতাহার হত্যাকাণ্ড: সিলেটে এক মর্মান্তিক ঘটনা

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় পাঁচ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের হত্যাকাণ্ডে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়াবহ শোক। গত ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার সাত দিন পর, ১০ নভেম্বর ভোরে তার মরদেহ পাওয়া যায় বাড়ির পাশের পুকুর থেকে। তার গলায় রশি পেঁচানো এবং শরীরে ক্ষতচিহ্ন দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

মুনতাহার পরিবারের সদস্যরা জানান, সে সকালেই তার বাবা শামীম আহমদের সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে আসে। তারপর সে আশপাশের বাড়িতে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেল ৩টার দিকে বাড়ি না ফেরায় তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত মুনতাহার কোন খোঁজ মেলেনি, ফলে পরিবারের সদস্যরা কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল জানিয়েছেন, “১০ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে মুনতাহার মরদেহ বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। তার গলায় রশি পেঁচানো ছিল এবং শরীরে বেশ কিছু ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।”

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মুনতাহার বাবা মনে করছেন যে, তার সন্তানকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। শিশু মুনতাহার পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে, তবে হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে।

অপহরণ ও হত্যার বিষয়টি আরও জটিল:

শিশু মুনতাহার নিখোঁজ হওয়ার পরপরই স্থানীয় এলাকাবাসী, স্বজনরা এবং পুলিশ মিলে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন, কিন্তু যখন তাকে পাওয়া গেলো, তখন সকলেই শোকাহত হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এটি একটি পরিকল্পিত অপহরণের ঘটনা হতে পারে, যা স্থানীয় কোনও ব্যক্তির মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্তের সময় আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্থানীয়দের বক্তব্য সংগ্রহ করছে।

পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও হতাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কেননা, এই ধরনের ঘটনা একটি ছোট গ্রামে অত্যন্ত বিরল এবং অপ্রত্যাশিত ছিল। অনেকেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে, কোন অজ্ঞাত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এমন নৃশংস কাজ করতে পারে, যা পুরো গ্রামকেই শোকাহত করেছে।

শিশু হত্যার প্রতিবাদ এবং ক্ষোভ:

শিশু হত্যার এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে গ্রামবাসী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেছেন। তারা সরকারের কাছে দ্রুত হত্যাকারীদের সনাক্ত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে।

মুনতাহার মা-বাবা শোকাহত হলেও, তারা চান যে এ ঘটনার সঠিক বিচার হোক এবং হত্যাকারীরা দ্রুত গ্রেপ্তার হোক। মুনতাহার বাবা জানান, “আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে, তারা যেন কোনওভাবেই রেহাই না পায়। আমার মেয়ের হত্যার সঠিক বিচার চাই।”

এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা সিলেটের কানাইঘাট অঞ্চলের বাসিন্দাদের গভীর শোকের মধ্যে ফেলেছে। মুনতাহার মতো নিষ্পাপ একটি শিশুকে এভাবে হত্যা করা সত্যিই মানবতাকে কলঙ্কিত করেছে। শিশুদের নিরাপত্তা এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের বিষয়ে এটি একটি বড় প্রশ্নবোধক হয়ে উঠেছে। সঠিক তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হওয়া উচিত যাতে এমন নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

2 Comments

  1. bristy

    খুবই দুঃখজনক ঘটনা 😴😴

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *