ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত শরীরে তরল কমে যাওয়ার (ডিহাইড্রেশন) এবং প্লাটিলেট কমে যাওয়ার সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই, ডেঙ্গু রোগীর জন্য সঠিক খাবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবারের মাধ্যমে শরীরের ইমিউনিটি শক্তিশালী করা, পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডেঙ্গু জ্বরে খাবারের মূল লক্ষ্য: ডেঙ্গু জ্বর
ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করা, যাতে শরীর দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তাই খাদ্যাভ্যাসে এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি যা অস্থিমজ্জার কার্যকারিতা বাড়ায় এবং শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখে।
যেসব খাবার খাবেন: ডেঙ্গু জ্বর
- চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ
- শক্তির জন্য স্যুপ একটি আদর্শ খাবার। এতে সবজি (যেমন ব্রকলি, মটরশুঁটি, ক্যাপসিকাম) এবং প্রোটিন থাকে, যা শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। এই স্যুপ শরীরের তরল ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি, অ্যান্টিবডি তৈরিতেও সহায়তা করে।
- টক দই
- টক দই একটি ভালো প্রোবায়োটিক উৎস, যা পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা দেয়।
- পেঁপে (বিশেষ করে পেঁপে জুস)
- পেঁপে ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস। যদিও পেঁপে অণুচক্রিকার সংখ্যা বাড়ায় কি না, সে বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন, তবুও এটি শরীরের জন্য উপকারী।
- ভাতের মাড়
- ভাতের মাড় ভিটামিন বি১২ এর ভালো উৎস। একে সেদ্ধ সবজি এবং লেবুর রস দিয়ে খাওয়া যেতে পারে, যা পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
- জাম্বুরা (পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি)
জাম্বুরা ভিটামিন সি এবং পটাশিয়ামের ভালো উৎস। এটি প্লাজমার সঙ্গে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীরের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- আনারের জুস
- আনারের জুস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে এবং অস্থিমজ্জার কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি আয়রন, ভিটামিন বি এবং ফসফরাসের ভালো উৎস।
- কচি ডাবের পানি
- কচি ডাবের পানি শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ইলেকট্রোলাইটসের ঘাটতি পূরণ করে। তবে, অতিরিক্ত পান করার পরামর্শ দেওয়া হয় না।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন:
- অতিরিক্ত মসলাদার খাবার
- মসলাদার খাবার হজমে অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন হয়, যা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, ডেঙ্গু জ্বরে শরীরে পানির ঘাটতি থাকতে পারে।
- ভাজাপোড়া খাবার
- ভাজা ও তেলে ভরা খাবার শরীরের জন্য খারাপ হতে পারে, কারণ এগুলো হজমে আরও পানি ব্যবহার করে, যা শরীরের পানির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
অতিরিক্ত পরামর্শ:
তরল খাবারের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিন: ডেঙ্গুতে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, ফলের রস এবং ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা জরুরি।
পুষ্টিকর খাবার: ডেঙ্গু জ্বরে পুষ্টির ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, এবং জিংক জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
ডেঙ্গু জ্বরে সঠিক খাদ্যাভ্যাস শরীরের দ্রুত সুস্থতায় সহায়ক হতে পারে। তাই, খাদ্য নির্বাচন ও পুষ্টির দিকে মনোযোগ দিয়ে দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব।
লেখক: মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল