ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দেশে বেড়েছে এবং এডিস মশা এর প্রধান বাহক। এডিস মশা থেকে ডেঙ্গু বা অন্যান্য মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বেশিরভাগ মানুষের মনে একটি প্রশ্ন থাকে, এডিস মশা কি কোনো বিশেষ অংশে কামড়াতে পছন্দ করে? এর উত্তর জানার জন্য বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে, যা আমাদের মশা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।
মশা কাদের বেশি কামড়ায়?
গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু বিশেষ ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য মশার প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে পারে। যেমন:
- রক্তের গ্রুপ: কিছু গবেষণা বলছে, রক্তের গ্রুপ ‘ও’ (O) হলে মশা তাদের বেশি কামড়ায়। যদিও অন্যান্য গবেষণার ফলাফল বিভিন্ন রকম। এর মানে এই নয় যে, মশা শুধু ‘ও’ গ্রুপের মানুষকেই কামড়াবে, বরং মশা যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তিকে কামড়াতে পারে।
- অপরিষ্কার বা ঘামে ভেজা ত্বক: যাঁরা ত্বকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি খুব একটা মনোযোগী নন, অথবা যাঁদের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয়, তাঁদের ত্বক মশার প্রতি আকর্ষণীয় হতে পারে। তবে, এমনও দেখা গেছে যে, খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিরাও মশার কামড় থেকে মুক্ত থাকেন না।
- প্রসাধনী ব্যবহারের প্রভাব: কেউ যদি নিয়মিত সাবান, ময়েশ্চারাইজার, ডিওডরেন্ট বা অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার করেন, তাহলে মশা সেই অংশে কম কামড়ায়। তবে এমন উদাহরণও রয়েছে যেখানে মশা একটি পরিষ্কার শিশুকে কামড়িয়েছে, যিনি নিয়মিত গোসল করে এবং ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন।
মশা কোথায় কামড়ায়?
গবেষণাগুলো এও দেখিয়েছে যে, মশা শরীরের কিছু নির্দিষ্ট অংশে বেশি কামড়ানোর প্রবণতা দেখায়। এডিস মশা, যা ডেঙ্গু জ্বর ছড়ায়, বিশেষ করে দাঁড়িয়ে বা বসা অবস্থায় মাথা ও ঘাড়ের কাছাকাছি অংশে কামড়ায়। অপরদিকে, ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস মশা সাধারণত পায়ের নিচের অংশে কামড়ায়। কিন্তু যখন কেউ শুয়ে থাকে, তখন মশা শরীরের যেকোনো অংশেই কামড়াতে পারে।
এছাড়া, অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বগলের জায়গা তুলনায় হাত বা পা মশার বেশি কামড় খায়, কিন্তু এসব বিষয়ও মশার আচরণগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়। এটি কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বা বৈশিষ্ট্য নয়, বরং কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
মশার প্রকোপ থেকে বাঁচার উপায়
মশার কামড় থেকে বাঁচতে হলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কিছু কার্যকরী উপায় হলো:
- মশারি ব্যবহার করুন: মশা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত। এটি ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
- ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরুন: দিনের বেলা বা সন্ধ্যায় বাইরে বের হলে, ফুলহাতা জামা এবং ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পরা ভাল। এটি শরীরের অধিকাংশ অংশ মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত রাখবে।
- মশকিউটো রিপেল্যান্ট ব্যবহার করুন: বিশেষ করে বাইরে গেলে, আপনার শরীরে মশকিউটো রিপেল্যান্ট স্প্রে বা ক্রিম লাগানো উচিত। এটি মশার কাছ থেকে রক্ষা করবে।
- পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন: ঘরবাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা এবং পানি জমতে না দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মশা দাঁড়ানোর জন্য জলাশয়গুলোর আশেপাশে বেশি থাকতে পছন্দ করে।
- মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য কিছু প্রাকৃতিক উপায়: লেবু বা তেলমধু, গোলাপজল এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করে মশাকে দূরে রাখা যায়। এছাড়া, ল্যাভেন্ডার, মেথি বা তুলসি পাতার গন্ধও মশাকে দূরে রাখে।
শেষ কথা
এডিস মশা শরীরের কোন অংশে কামড়ায়, সে বিষয়ে এখনও পুরোপুরি কোনো সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশা সাধারণত মাথা ও ঘাড়ের কাছাকাছি অংশে বেশি কামড়ায়, যখন আপনি দাঁড়িয়ে বা বসে থাকেন। তবে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মশার কামড় থেকে বাঁচার নিয়মিত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।