চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনা
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন বাবলা ধর, সজল শীল এবং দুর্লভ দাস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে নগরের কোতোয়ালি এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের মধ্যে দুর্লভ দাস আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে ছিলেন। তদন্তকারীরা ভিডিও ফুটেজ দেখে তাঁকে শনাক্ত করেছেন। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, এই তিনজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন আইনজীবী হত্যার ঘটনায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন এবং ঘটনার সময় তাঁর হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রেপ্তার আসামির সংখ্যা ৩৮-এ দাঁড়িয়েছে, এর মধ্যে নয়জন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।
ওসি আরও বলেন, “এ পর্যন্ত আইনজীবী হত্যার ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি, তবে আইনজীবীর পরিবার মামলা করতে থানায় আসার কথা জানিয়েছে।”
পুলিশ জানায়, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় মোট ২৫ থেকে ৩০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৪ জন সাইফুলকে কোপানোর কাজ করেছিল। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ এখন পর্যন্ত নয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। জামিন বাতিল হওয়ার পর তাঁকে কারাগারে প্রেরণের জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তাঁর অনুসারীরা বাধা দেন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় পুলিশ ও বিজিবি লাঠিপেটা এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের পর, কিছু আইনজীবী মিছিল করে প্রতিবাদ করেন। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মিছিল শেষে ফেরার পথে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম রাস্তায় পড়ে গিয়ে হামলার শিকার হন। তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাইফুল ইসলামকে কোপাচ্ছে তিনজন: ওম দাশ, চন্দন ও রনব। তাঁর নিথর দেহ পড়ে থাকলেও, হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এই হামলার সময় সেখানে আরও ২৫-৩০ জন উপস্থিত ছিলেন, যাদের বেশিরভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। পুলিশের তথ্য মতে, এক ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে, এবং আরও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।