নবজাতক বা ছোট শিশুদের ঘুম নিয়ে অনেক বাবা-মা উদ্বিগ্ন থাকেন।শিশুর ঘুমের সমস্যার সমাধানে ৩ টি কার্যকরী পদ্ধতি। শিশুর ঘুমের সমস্যা একটি সাধারণ বিষয় হলেও, এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হয়ে উঠলে সেটা মা-বাবার জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুদের জন্য দৈনিক প্রায় ১৬ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন, তবে বয়স অনুযায়ী ঘুমের প্রয়োজনীয়তা কিছুটা পরিবর্তিত হয়।
বিশেষত, রাতে ঘুমের সমস্যার কারণে শিশুর স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়তে পারে এবং পরিবারের রুটিনেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সুতরাং, শিশুর ঘুমের সমস্যা দূর করতে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই নিবন্ধে আমরা ৩টি কার্যকরী পদ্ধতি আলোচনা করব, যা শিশুদের ঘুমের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
শিশুর ঘুমের সমস্যার প্রধান কারণ
বাচ্চার ঘুমে সমস্যা হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। তবে তিনটি কারণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ:
- ক্ষুধা বা অন্য কোনো অস্বস্তি: অনেক সময় শিশুর পেট খালি থাকতে পারে বা তার শরীরের কোনো অস্বস্তি শিশুকে ঘুমাতে দেয় না।
- শারীরিক অস্বস্তি: কখনও কখনও শিশুর শরীরে ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক বা অন্য কোনো সমস্যা শিশুর ঘুমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- মায়ের সান্নিধ্য: শিশু যখন মায়ের কাছে থাকে না, তখন সে ঘুমাতে অসুবিধা অনুভব করতে পারে।
ফার্বার পদ্ধতি: শিশুকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘুমাতে অভ্যস্ত করা
ফার্বার পদ্ধতি একটি জনপ্রিয় ও কার্যকরী পদ্ধতি, যা শিশুকে নিজের বিছানায় ঘুমাতে অভ্যস্ত করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হল শিশুকে এমনভাবে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা, যাতে সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘুমাতে পারে, এবং তার ঘুমের প্যাটার্ন আরও নিয়মিত হয়ে ওঠে।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন:
- শিশুকে তার বিছানায় শুইয়ে শুভরাত্রি বলুন এবং ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হয়ে যান।
- যদি শিশুটি কান্না শুরু করে, প্রথমে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর ঘরে ফিরে শিশুকে শান্ত করুন, কিন্তু তাকে বিছানা থেকে তুলবেন না।
- এরপর প্রতি ৫ মিনিটে একে একে সময় বাড়িয়ে দিন, যাতে শিশুটি একা ঘুমাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
- এই পদ্ধতিতে ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে কার্যকারিতা দেখা যেতে পারে।
অসুবিধা:
- কিছু মা-বাবার জন্য শিশুর কান্না সহ্য করা কঠিন হতে পারে।
- যদি শিশুটি ১৫ দিনের মধ্যে সাড়া না দেয়, তবে অন্য পদ্ধতি চেষ্টা করা প্রয়োজন।
নির্দিষ্ট সময় পর শিশুকে জাগিয়ে তোলা

এই পদ্ধতিতে শিশুর ঘুমের প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করে তার ঘুমের সময়কে সামঞ্জস্য করা হয়। যখন শিশুটি গভীর ঘুমে থাকে, তখন তাকে ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট সময় পর জাগিয়ে তোলা হয়। এটি শিশুকে আরো দীর্ঘ সময় ঘুমাতে সহায়ক হয়।
এই পদ্ধতিটি কীভাবে কাজ করে:
- প্রথমে শিশুর ঘুমের প্যাটার্ন নোট করুন এবং শিশুটি কখন ঘুম থেকে উঠে তা জানুন।
- এক সপ্তাহ ধরে এই সময়ের ১৫ মিনিট আগে শিশুকে জাগিয়ে তুলুন, এবং ধীরে ধীরে এ সময় বাড়িয়ে দিন।
- এই পদ্ধতি ৩-৪ সপ্তাহে কার্যকর হতে পারে।
অসুবিধা:
- এটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি হতে পারে, তাই ধৈর্য প্রয়োজন।
- এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গিয়ে মায়ের দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
পারিবারিক বিছানায় ঘুমানোর পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে শিশুকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমাতে দেয়া হয়। এতে শিশুটি নিরাপদ ও আরামদায়ক অনুভব করে। বিশেষত, বুকের দুধ খাওয়ার সময় এটি বেশ সুবিধাজনক হতে পারে। শিশুর ঘুমের সমস্যা সমাধানে এই পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়।
অবশ্যই মনে রাখুন:
- পারিবারিক বিছানায় শোয়ার ক্ষেত্রে বিছানাটি প্রশস্ত হতে হবে, যাতে সবাই আরামে ঘুমাতে পারে।
- শিশুকে বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করানো যায়, তবে এটিও মনোযোগ দিয়ে প্রভাবিত হতে পারে যদি বিছানাটি একেবারে সীমিত হয়।
বাচ্চার ঘুম নিয়মিত করতে কিছু সাধারণ টিপস
- নির্দিষ্ট সময় রুটিন: প্রতিদিন একই সময়ে শিশুকে ঘুম পাড়ান, যাতে সে ঘুমানোর জন্য অভ্যস্ত হয়।
- পেট পূর্ণ থাকা নিশ্চিত করুন: শিশুর পেট খালি রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন না, কারণ ক্ষুধা নিয়ে ঘুমানো শিশুর জন্য স্বাভাবিক নয়।
- শিশুর মনোরঞ্জন: সন্ধ্যার সময় শিশুকে খেলাধুলা বা বিভিন্ন ব্যস্ততায় রাখুন, যাতে তার ঘুম ভালো হয়।
- মাঝরাতে কোলে না তুলে ঘুম পাড়ান: যখন শিশু রাতে উঠে, তাকে কোলে না তুলে বরং মাথায় হাত বুলিয়ে অথবা পিঠে চাপড় দিয়ে তাকে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- প্রতিদিন ঘুমের সময় ১৫% বৃদ্ধি: শিশুর ঘুমের সময় প্রতি সপ্তাহে ১৫% করে বৃদ্ধি করা উচিত।
- কিন্তু ৯০% শিশু একই পদ্ধতির প্রতি সাড়া দেয় না: কিছু শিশু পদ্ধতিতে সাড়া দেয় না, এজন্য পদ্ধতি বদলাতে হতে পারে।
- ৩-৭ দিনের মধ্যে ফল পাওয়া যেতে পারে: ফার্বার পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুর ঘুমের ধরন উন্নত করতে ৩ থেকে ৭ দিন সময় লাগে।
- ঘুমের রুটিন স্থির করুন: ঘুমের সময়সূচি শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- বয়স অনুযায়ী ঘুমের সময় কমবেশি হতে পারে: বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের প্রয়োজন ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
উপসংহার
শিশুর ঘুমের সমস্যা নিয়ে মা-বাবার চিন্তা নতুন নয়। তবে, সঠিক পদ্ধতি ও ধৈর্যের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। ফার্বার পদ্ধতি, নির্দিষ্ট সময় পর জাগিয়ে তোলার পদ্ধতি, এবং পারিবারিক বিছানায় ঘুমানোর পদ্ধতি প্রত্যেক শিশুর জন্য কার্যকর হতে পারে। তবে, কোনো একটি পদ্ধতি ফলপ্রসূ না হলে অন্য পদ্ধতি চেষ্টা করা যেতে পারে।