মেঘনায় জাহাজে ৭ খুন: যেভাবে ধরা পড়েন ‘একমাত্র’ খুনি
মেঘনায় জাহাজে সাতজনকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার আকাশ মণ্ডল। বুধবার কুমিল্লা নগরের শাকতলায় র‍্যাবের কার্যালয়ে

মেঘনায় জাহাজে ৭ খুন: যেভাবে ধরা পড়েন ‘একমাত্র’ খুনি

মেঘনায় নৌযানের পাঁচটি কক্ষে পড়ে ছিল পাঁচ রক্তাক্ত লাশ। মেঘনায় জাহাজে ৭ খুন: যেভাবে ধরা পড়েন ‘একমাত্র’ খুনি,ক্ষোভ থেকে প্রথমে জাহাজের মাস্টারকে, ধরা পড়ার ভয়ে আরও ছয়জনকে হত্যা। মেঘনায় সাত খুনে যা জানা গেল।

মেঘনায় জাহাজে সাতজনকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার আকাশ মণ্ডল। বুধবার কুমিল্লা নগরের শাকতলায় র‍্যাবের কার্যালয়ে এই ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করা সারবাহী এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় ওই জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। মঙ্গলবার রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাব-১১ ও ৬-এর যৌথ অভিযানে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, আকাশ মণ্ডলই জাহাজে সাত খুনের ‘একমাত্র’ খুনি। নিয়মিত বেতন–ভাতা ও ছুটি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি প্রথমে জাহাজের মাস্টারকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেন। এরপর বাকি সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন, যাতে ধরা না পড়েন। তবে তাঁদের মধ্যে একজন বেঁচে যান।

গ্রেপ্তার আকাশ বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের জগদীশ মণ্ডলের ছেলে। র‍্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পালানোর সময় আকাশ নিহত ব্যক্তিদের পাঁচটি মুঠোফোন নিজের ব্যাগে করে নিয়ে যান। এর মধ্যে জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া ও গুরুতর আহত অবস্থায় বেঁচে যাওয়া সুকানি জুয়েলের মুঠোফোনও ছিল। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁর অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রথমে পুরো ঘটনা অস্বীকার করেন আকাশ। তবে নিহত ব্যক্তিদের মুঠোফোন পাওয়ার পর তিনি পুরো ঘটনা স্বীকার করেন।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাতজন মানুষকে আকাশ একা খুন করেছে শুনে আমরাও অবাক হয়েছি। এরপর বিভিন্নভাবে অন্তত ১২ বার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রতিবারই একই রকম তথ্য দিয়েছে আকাশ। তাঁর দেওয়া তথ্যের সবকিছুই ক্রস চেক করেছি এবং সঠিক পেয়েছি।’ আকাশ মণ্ডল হিন্দু হলেও জাহাজের সবাই তাঁকে ইরফান নামে চিনতেন।

র‍্যাবের দেওয়া তথ্যমতে, গ্রেপ্তারের সময় আকাশের কাছ থেকে একটি গ্লাভস, একটি ব্যাগ, ঘুমের ওষুধের খালি পাতা, নিহত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত পাঁচটি, আকাশের ব্যবহৃত দুটিসহ মোট সাতটি মুঠোফোন এবং বিভিন্ন জায়গায় রক্তমাখা নীল রঙের একটি জিনস প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সময় ওই জিনস প্যান্ট পরে ছিলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, এমভি আল-বাখেরা জাহাজ থেকে গত সোমবার বেলা তিনটার পর পাঁচজনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। আর তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় একটি মামলা করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আকাশ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *