ভূমিকা
আপনার কি মাঝে মাঝে মনে হয় আপনার হাত বা পা ঝিমঝিম করছে বা চুলকাচ্ছে, যেন আপনি চিবিয়ে খেতে চান? বাংলাদেশের অনেক মানুষ, ছোট-বড়, প্রায়শই এই সমস্যায় ভোগেন। কখনও কখনও এটি স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ, কখনও কখনও এটি পুষ্টির অভাব বা রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হতে পারে। আমারও একবার এই সমস্যা হয়েছিল, তাই আমি জানি এটি কতটা বিরক্তিকর। অবশ্যই, চিকিৎসা প্রয়োজন, তবে ঘরোয়া প্রতিকার প্রায়শই উপশম দিতে পারে। এই নিবন্ধে, আমি আপনার সাথে কিছু কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার শেয়ার করব যা আমি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি।
হাত পা চাবানোর মূল কারণ
আমার এক বন্ধুর মা প্রায়ই রাতে ঘুমানোর সময় বলতেন, “মনে হয় হাতটা কামড়াতে ইচ্ছা করছে।” প্রথমে সবাই বিষয়টা হাসির মধ্যে নিলেও পরে বুঝতে পারি, এটা একধরনের সমস্যা, যেটা বেশিরভাগ সময় অবহেলা করা হয়।
হাত পা চাবায় কেন? এই প্রশ্নের পেছনে রয়েছে কিছু সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
১. স্নায়বিক সমস্যা (নার্ভ ডিজঅর্ডার):
হাত বা পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা সঠিকভাবে কাজ না করলে এমন অস্বাভাবিক অনুভূতি দেখা দেয়। বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘ সময় বসে বা একই ভঙ্গিতে থাকেন, তাঁদের মাঝে এটা বেশি হয়।
২. রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা:
হাতে বা পায়ে ঠিকভাবে রক্ত না পৌঁছালে সেই স্থান অসাড়, জ্বালাপোড়া বা চাবানোর মতো অস্বস্তি দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই কোলেস্টেরল থাকলেও এই সমস্যা হতে পারে।
৩. ডায়াবেটিস ও মিনারেল ঘাটতি:
ডায়াবেটিসে নিউরোপ্যাথি একটি সাধারণ জটিলতা। আবার ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম বা ভিটামিন B12-এর ঘাটতি থাকলেও হাত পা চাবানোর অনুভূতি হয়।
৪. ঘুম ও মানসিক চাপ:
অতিরিক্ত স্ট্রেস, ঘুমের ঘাটতি কিংবা উদ্বেগজনিত কারণে শরীর অনিয়ন্ত্রিত রিঅ্যাকশন করে, যার মধ্যে হাত পা কামড়ানোর প্রবণতাও আছে।
এই কারণগুলো সাধারণ মনে হলেও, বারবার হলে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়াই ভালো। মনে রাখবেন, ছোট উপসর্গই অনেক সময় বড় রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।
সূত্র: Mayo Clinic, Harvard Health, ২০২৫ আপডেটেড মেডিকেল রিভিউ রিপোর্ট
রাতে হাত পা কামড়ানোর কারণ কী
রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ করে পা টানতে শুরু করে? বা হাত যেন কামড়ে ফেলতে ইচ্ছা হয়? আপনি একা নন। বাংলাদেশে বহু মানুষ, বিশেষ করে ৩০-এর পর, এই সমস্যার মুখোমুখি হন। আমার বাবা অনেকদিন ধরেই রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ উঠে বসে বলতেন, “পা টান দিছে, আর সহ্য হয় না।” তখনই বুঝেছি, এটা যতটা সাধারণ মনে হয়, ততটা নয়।
১. Restless Leg Syndrome (RLS):
রাতে হাত পা কামড়ানোর কারণ কি, এই প্রশ্নে প্রথমেই আসে RLS-এর নাম। এটি এমন এক অবস্থা যেখানে পায়ে অস্বস্তি হয় এবং নাড়াতে নাড়াতে ঘুম আসে না। কারণটা এখনো পুরোপুরি বোঝা না গেলেও, স্নায়বিক অস্বাভাবিকতা এবং ডোপামিন ভারসাম্যের অভাবকে দায়ী করা হয়। ২০২৫ সালের Mayo Clinic গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ১০% প্রাপ্তবয়স্ক এই সমস্যায় ভোগেন।
২. রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তন:
ঘুমানোর সময় শরীরের অবস্থান বদলের ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন। এতে হাত পা ঘনঘন পিনচিং বা কামড়ানোর মতো অনুভব হয়।
৩. হরমোনাল ইমব্যালেন্স:
বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে প্রেগনেন্সি বা মেনোপজ চলাকালীন ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের তারতম্য এই ধরণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪. মস্তিষ্ক-পেশি সিগনালের অসামঞ্জস্য:
মস্তিষ্ক থেকে পেশিতে যে সংকেত পাঠানো হয়, সেটি যদি ঠিকভাবে না যায়, তখন হাত বা পায়ে অস্বাভাবিক টান বা কামড়ের মতো অনুভূতি হয়।
ব্যক্তিগত টিপস: আমার বাবাকে রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য হাঁটাহাঁটি ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার (যেমন কলা) খেতে দেওয়ার পর থেকে এই সমস্যা অনেকটা কমে এসেছে।
সূত্র: Mayo Clinic (2025), Harvard Health, Sleep Foundation

হাত চাবানোর চিকিৎসা
আমি নিজে যখন প্রথম “হাত চাবানোর” সমস্যায় পড়ি, তখন বুঝতেই পারছিলাম না সমস্যাটা আসলে শারীরিক না মানসিক। মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠে হাত কামড়াতে ইচ্ছা করত। পরে চিকিৎসকের কাছে গেলে বোঝা গেল, এটা একা আমার সমস্যা নয়। অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন, কিন্তু চুপ থাকেন।
১. মেডিকেল চিকিৎসার ধাপ:
প্রথম ধাপে চিকিৎসক সাধারণত রোগের ইতিহাস নেন, কবে থেকে হয়েছে, কত সময় ধরে, কতটা তীব্রতা। এরপর সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা করেন এবং প্রয়োজনে ব্লাড টেস্ট, ভিটামিন লেভেল চেক কিংবা নার্ভ কন্ডাকশন স্টাডির পরামর্শ দেন।
২. বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জরুরি:
যদি সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে নিউরোলজিস্ট বা জেনারেল ফিজিশিয়ান দেখানো জরুরি। বিশেষ করে যদি হাতে অসাড়তা, জ্বালাপোড়া, বা দুর্বলতা দেখা দেয়।
৩. ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট:
২০২৫ সালের BMA রিপোর্টে (Bangladesh Medical Association) বলা হয়েছে, ভিটামিন B12, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হাত চাবানোর অন্যতম কারণ। সঠিক মাত্রায় সাপ্লিমেন্ট খাওয়ালে অনেক রোগীর উপসর্গ ৩–৪ সপ্তাহের মধ্যে কমে আসে।
৪. প্রয়োজনীয় পরীক্ষা:
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অন্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা হাইপারথাইরয়েডিজম থাকছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা। কারণ এই রোগগুলোর প্রভাবে স্নায়ু দুর্বল হয়ে এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতায়, শুধু পেইন কিলার খেলে উপকার হয়নি। বরং যখন ডাক্তার নার্ভ রিলেটেড সমস্যার দিকে নজর দিলেন, তখন সঠিক চিকিৎসায় ভালো ফল এসেছে।
সূত্র: BMA Medical Journal (2025), Mayo Clinic, National Institute of Neurological Disorders
হাত পা চাবানোর ঘরোয়া চিকিৎসা
আমার মায়ের পায়ে রাতে প্রায়ই চুলকানি ও চাবানোর মতো অনুভব হতো। ডাক্তার দেখিয়েছি, ওষুধও চলছিল। কিন্তু সম্পূর্ণ আরাম পাচ্ছিলেন না। তখনই ভাবলাম, কিছু ঘরোয়া উপায় চেষ্টা করে দেখা যাক। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, হাত পা চাবানোর ঘরোয়া চিকিৎসা সত্যিই কার্যকর হতে পারে, যদি আপনি নিয়ম করে এগুলো মেনে চলেন।
১. আদা ও নারকেল তেলের মালিশ
আদায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রক্ত চলাচল বাড়ায়। হালকা গরম নারকেল তেলের সঙ্গে এক টুকরো আদা মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে হাত ও পায়ে মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়। আমি মায়ের পায়ে প্রতিদিন ১০ মিনিট করে মালিশ করেছি, ৫ দিনের মধ্যেই তিনি স্বস্তি অনুভব করেন।
২. গরম পানির সেঁক
গরম পানিতে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে হাতে বা পায়ে লাগান। এতে নার্ভ শান্ত হয় এবং সঞ্চালন ভালো হয়। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে দিলে অনেকটা চাবানোর অনুভূতি কমে আসে।
৩. হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং
একটানা বসে থাকার ফলে স্নায়ু ও পেশি জমে যায়। হাঁটার অভ্যাস, পায়ের স্ট্রেচিং, বা ৫ মিনিটের যোগব্যায়াম (যেমন লেগ স্ট্রেচ বা কোমর ঘোরানো) হাত পা চাবানোর ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে দারুণ কাজ করে।
৪. ঘুমানোর আগে পা তুলে বসা
শোবার আগে ১০–১৫ মিনিটের জন্য পা একটু উঁচু করে বসুন (যেমন বালিশের উপর)। এতে রক্ত ঠিকভাবে সঞ্চালিত হয়, পায়ে জড়তা বা কামড়ের অনুভব কমে।
৫. পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার
ডিহাইড্রেশন বা ইলেক্ট্রোলাইটের অভাব হাত পা চাবানোর অন্যতম কারণ। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। সঙ্গে কলা, খেজুর, ডিম, সবুজ শাকসবজি রাখুন খাবারের তালিকায়। এতে ভিটামিন B12, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন পূরণ হয়।
৬. মানসিক চাপ কমাতে ঘরোয়া পদ্ধতি
অনিদ্রা বা স্ট্রেস থেকেও হাত পা চাবানোর প্রবণতা বাড়ে। আমি প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে ৫ মিনিট ধ্যান (মেডিটেশন), হালকা বাজনা বা সাদাসিধা মোমবাতি জ্বালিয়ে রিলাক্স করার চেষ্টা করি। এটি মন ও শরীর – দুটোকেই প্রশমিত করে।
ব্যক্তিগত উপসংহার:
আমার ব্যক্তিগত এবং আমার পরিবারের অভিজ্ঞতা থেকে, হাত ও পায়ের এঁটেল পোকা নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া প্রতিকারের ধারাবাহিক প্রয়োগ খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলি কেবল ব্যবহার করা সহজ এবং সাশ্রয়ী নয়, এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকার উল্লেখযোগ্য সুবিধাও রয়েছে।
সূত্র:
- Mayo Clinic Sleep & Nerve Health Update, 2025
- BMA স্বাস্থ্য পত্রিকা, বাংলাদেশ
- আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা (মা, বাবা, আত্মীয়দের সমস্যা ও সমাধান)

হাত পা কামড়ানো কমানোর উপায়
আমি যখন অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় বসে থাকি, অনেক সময় পায়ে এক অদ্ভুত ঝিঁ ঝিঁ ভাব বা চাবানোর মতো অস্বস্তি শুরু হয়। প্রথমে মনে করতাম, এটা সাময়িক কিছু। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম, হাত পা কামড়ানো কমানোর উপায় না জানলে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
নিচে আমি যেসব উপায় নিজের জীবন ও পরিচিতদের মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছি, সেগুলো বাস্তব ও কার্যকর:
১. জীবনযাপন পরিবর্তন
সারাদিন একভাবে বসে থাকলে রক্ত চলাচলে সমস্যা হয়। তাই আমি প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করি। বাসার সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামাও কাজে দেয়। দিনে দিনে বুঝতে পারি, চলাফেরা বাড়ালে হাত-পা কামড়ানোর অনুভূতি কমে।
২. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
কফি বা চা বেশি খেলে ঘুমের সমস্যা হয়, আর ঘুম কম হলেই পায়ে জ্বালা বা কামড় বাড়ে। আমি রাত ৮টার পর এসব পান করা বন্ধ করেছি। WHO-এর ২০২৫ রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘুমজনিত সমস্যার সঙ্গে ক্যাফেইনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
৩. নির্দিষ্ট সময়ের ঘুম
একই সময় ঘুমানো ও জেগে ওঠার অভ্যাস রক্তচাপ ও স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রাখে। আমি প্রতিদিন রাত ১১টার মধ্যে ঘুমানোর চেষ্টা করি এবং মোবাইল স্ক্রিন বন্ধ রাখি। এতে মস্তিষ্ক আরাম পায়, এবং হাত-পায়ের অস্বস্তি কমে।
৪. স্ট্রেস কমানোর অভ্যাস
মানসিক চাপ হাত-পা চাবানোর বড় কারণ। আমি দিনে ১০ মিনিট করে ধ্যান করি, আর মাঝে মাঝে হালকা মিউজিক শুনি। এটা একদম ছোট বিষয় মনে হলেও, মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে ব্যাপক সাহায্য করে।
উপসংহার:
হাত পা কামড়ানো কমানোর উপায় কোনো ম্যাজিক নয়, বরং নিয়মিত কিছু ছোট পরিবর্তন। আমি নিজে এগুলো কাজে লাগিয়ে অনেক উপকার পেয়েছি। আপনি যদি নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে ওষুধ ছাড়াও আরাম পাওয়া সম্ভব।
সূত্র: WHO Lifestyle Health Update 2025, BMA স্বাস্থ্য বার্তা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা (নিজের ও সহকর্মীদের)
পা কামড়ানো কমানোর ব্যায়াম
আমি একসময় রাতে ঘুমাতে গেলেই পায়ের পেশিতে টান অনুভব করতাম। পরে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বন্ধুর কাছ থেকে শিখে নিয়েছি কিছু সহজ ব্যায়াম, যেগুলো পা কামড়ানো কমানোর ব্যায়াম হিসেবে সত্যিই কাজে দেয়।
১. Toe Flex & Calf Stretch
একটি দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে পায়ের আঙুল টানটান করে সামনে রাখুন, গোড়ালি পেছনে রেখে ক্যালফ মাসলে টান দিন। ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, দিনে ২–৩ বার।
২. লেগ রোল
মেঝেতে শুয়ে দুই পা সামান্য উপরে তুলে ডানে–বামে ঘোরান। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং পেশির জড়তা কমে।
৩. হাঁটু উঠানো ও নামানোর ব্যায়াম
চেয়ারে বসে ধীরে ধীরে এক পা হাঁটু পর্যন্ত তুলুন, ৫ সেকেন্ড ধরে আবার নামান। প্রতিটি পায়ে ১০ বার করুন। এটা বসে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য খুব উপকারী।
৪. ঘুমানোর আগে হালকা যোগব্যায়াম
পায়ে হালকা স্ট্রেচ বা “legs-up-the-wall” পজিশন ঘুমের আগে করলে মস্তিষ্ক ও স্নায়ু একসঙ্গে শিথিল হয়।
📌 ব্যক্তিগত পরামর্শ:v
আমি এগুলো নিয়মিত করে ঘুমের আগে শুয়ে পড়ি। মাত্র ৭ দিনেই পায়ের টান ধীরে ধীরে কমে গেছে।
সূত্র: BMA ফিজিওথেরাপি গাইড (২০২৫), ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, Healthline Yoga Update

চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন?
আমরা অনেক সময় হাত পা চাবানো বা কামড়ানোর সমস্যাকে ছোট বিষয় ভেবে এড়িয়ে যাই। কিন্তু সব সমস্যাই ঘরোয়া উপায়ে ঠিক হয় না। কিছু উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়
যদি আপনি ৩ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে হাত পা চাবানোর অনুভূতি টানা অনুভব করেন, এবং কোনো ঘরোয়া চিকিৎসায় উপকার না পান, তবে দেরি না করে নিউরোলজিস্ট বা সাধারণ চিকিৎসক দেখান।
চলাফেরায় বাধা দিলে
যদি পায়ের কামড় বা ঝিঁ ঝিঁ এমন পর্যায়ে যায় যে হাঁটতে কষ্ট হয়, বা ব্যায়াম করতে সমস্যা হয়—তখন এটা স্নায়ুর জটিলতার লক্ষণ হতে পারে।
রাতে ঘুম ব্যাহত হলে
আমার এক বন্ধুর ছিল RLS (Restless Leg Syndrome)। প্রতিদিন রাতে ঘুম ভেঙে যেত চুলকানির মতো পায়ে অস্বস্তির কারণে। পরে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে সে পুরোপুরি সুস্থ হয়।
কোনো অঙ্গ অসাড় হলে
হাত বা পায়ে যদি অনুভূতি কমে আসে বা একদমই কাজ না করে, তবে এটা স্নায়ু ব্লক বা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে – যা অবহেলা করলে ভয়ংকর হতে পারে।
সূত্র: Mayo Clinic Neurology Report 2025, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (BMA)
ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা / আমার মতামত
আমার মা প্রায়ই রাতে পায়ে অদ্ভুত চুলকানি, কামড়ের মতো অনুভব করতেন। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এটা সাময়িক, কিন্তু সমস্যা বাড়তে থাকায় আমি কিছু ঘরোয়া উপায় খুঁজতে শুরু করি।
আমি ঘরোয়া চিকিৎসাকে গুরুত্ব দিই, কারণ এটা সহজ, খরচ কম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায় নেই। আমি মায়ের পায়ে প্রতিদিন গরম নারকেল তেলে মালিশ করতে শুরু করি, সঙ্গে হালকা স্ট্রেচিং আর পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করি। ফলাফল – ১ সপ্তাহের মধ্যে তিনি অনেকটা স্বস্তি পেয়েছেন।
এই অভিজ্ঞতা আমার পরিবারকে বুঝিয়েছে, প্রত্যেক অসুস্থতায় আগে নিজের সচেতনতা জরুরি। এখন আমাদের বাসায় কারো পা বা হাতে এমন কিছু হলে আগে ঘরোয়া চিকিৎসাই চেষ্টা করি। এতে ওষুধের ব্যবহারও অনেক কমে গেছে।
ঘরোয়া সমাধান শুধু শরীর নয়, মনেও আশ্বস্ততা আনে – এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি।
উপসংহার
হাত পা চাবানোর সমস্যা ছোট মনে হলেও, এটি কখনও কখনও বড় শারীরিক সংকেত হতে পারে। তাই একে অবহেলা করা উচিত নয়। ঘরোয়া চিকিৎসা যেমন আদার মালিশ বা স্ট্রেচিং, তেমনই প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
আমি বিশ্বাস করি, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া পদ্ধতির সম্মিলিত ব্যবহারই দীর্ঘস্থায়ী স্বস্তির পথ। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো – স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, মানসিক শান্তি আর নিয়মিত ঘুম – এই চারটি অভ্যাসই আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে।
নিজের যত্ন নেওয়াই ভবিষ্যতের বড় সুরক্ষা।