ভূমিকা
মূত্রনালীর জ্বালাপোড়া একটি অস্বস্তিকর সমস্যা যা অনেকেই প্রথমে উপেক্ষা করে। কিন্তু এই ছোট লক্ষণটি মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI), কিডনির সমস্যা বা ডায়াবেটিসের প্রভাবের মতো বড় রোগের পূর্বসূরী হতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক রোগীকে দেখেছি যারা পর্যাপ্ত পানি পান না করার কারণে এই সমস্যায় ভোগেন এবং পরে এটি জটিল হয়ে ওঠে।
বর্তমানে, বাংলাদেশে এই সমস্যাটি ক্রমশ বাড়ছে, মূলত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অপর্যাপ্ত পানি গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবের কারণে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে, শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হয়।
এই প্রবন্ধে, আমি এর সম্ভাব্য কারণ, সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার এবং এটি প্রতিরোধের উপায়গুলি তুলে ধরব। আমি এটি এমনভাবে উপস্থাপন করব যাতে আপনার মতো সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে এবং বাড়িতে এটি প্রয়োগ করতে পারে। আসুন সচেতনতার একটি ধাপ দিয়ে শুরু করি।
প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কী?
আমরা সাধারণত একে প্রস্রাবের সময় বা পরে জ্বালাপোড়া, চুলকানি বা ব্যথা বলি। অনেকেই মনে করেন এটি গুরুতর কিছু নয় এবং অল্প পানি পান করলে তাদের ভালো বোধ হবে, কিন্তু সত্যি বলতে, এটি প্রায়শই শরীরের অভ্যন্তরে কোনও গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
এই সমস্যাটি মূলত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়। বাংলাদেশে, বিশেষ করে ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) খুবই সাধারণ। কখনও কখনও এই জ্বালাপোড়া কিডনির সমস্যা বা মূত্রাশয়ের পাথরের কারণেও হতে পারে।
প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো:
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা
- ঘন ঘন প্রস্রাব পায়
- প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে যায় বা দুর্গন্ধযুক্ত হয়
- নিচের পেটে ভারী লাগা
আমি নিজেও একবার এমন সমস্যায় পড়েছিলাম, তখন ডাক্তার ইউরিন টেস্ট করিয়ে ইউরিন ইনফেকশন শনাক্ত করেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছি, এ সমস্যার শুরুতে ব্যবস্থা না নিলে, তা কিডনি পর্যন্ত গড়াতে পারে।
তথ্যসূত্র:
- Mayo Clinic, 2025 update
- ICDDR,B স্বাস্থ্য গবেষণা রিপোর্ট – বাংলাদেশ,

পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়?
একজন পুরুষ হিসেবে, আমি জানি যে প্রস্রাবের সময় সামান্য জ্বালাপোড়া কখনও কখনও বড় সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অনেকেই এটিকে অবহেলা করে, লজ্জাজনক বলে মনে করে, তবে আমি বলব সচেতন থাকুন, কারণ পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যার কারণগুলি একটু ভিন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই) প্রায়শই দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি, কম জল পান করা বা খারাপ টয়লেট অভ্যাসের কারণে হতে পারে। আমি একজন পুরুষকে চিনি যিনি দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখতেন, যার ফলে তার মূত্রনালীর সংক্রমণ হয়েছিল এবং তার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, ক্ল্যামাইডিয়া বা গনোরিয়ার মতো যৌনবাহিত রোগ (এসটিডি) বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশে এখনও অনেকের কাছে অজানা। এই ধরনের সংক্রমণ গোপনে মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে।
তৃতীয়ত, প্রস্রাবে পাথর থাকলেও এই ধরণের জ্বালাপোড়া হতে পারে। ছোট পাথর মূত্রনালীর সাথে ঘষতে পারে এবং প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায় কারণ তাদের প্রস্রাবে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ব্যাকটেরিয়া সহজেই বৃদ্ধি পেতে দেয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অনেক মানুষ নিয়মিত চেকআপ করান না। কিন্তু ২০২৫ সালের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসারে, বছরে অন্তত একবার প্রস্রাব পরীক্ষা করা উচিত।
তথ্যসূত্র:
- Mayo Clinic, UTI & Male Urinary Health (2025)
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU), ইউরিনারি স্বাস্থ্য রিপোর্ট
মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়?
মহিলাদের শরীরের গঠনের (ছোট মূত্রনালী) কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। আমার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি – তিনি গ্রীষ্মে কম পানি পান করতেন এবং মাসিকের সময় সাবধান থাকতেন না। ফলস্বরূপ, প্রস্রাব করার সময় তার প্রায়শই জ্বালাপোড়া হতো। পরে, ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন যে এটি মূত্রনালীর সংক্রমণের ফলাফল।
শারীরবৃত্তীয় কারণ: যেহেতু মহিলাদের মূত্রনালী ছোট, তাই ব্যাকটেরিয়া সহজেই বাইরে থেকে প্রবেশ করতে পারে।
মাসিক বা যৌন মিলনের পরে পরিষ্কার না থাকা: এই সময়ে জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি থাকে। টয়লেট ব্যবহারের সময় ভুল অভ্যাসের (পিছন থেকে সামনের দিকে মোছা) কারণেও সংক্রমণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজ: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। মেনোপজের পরে, ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির ফলে মূত্রনালীর শুষ্কতা দেখা দেয়, যা সংক্রমণের দিকে পরিচালিত করে।
অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার: অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার ভালো ব্যাকটেরিয়াকেও মেরে ফেলে, সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
তথ্যসূত্র:
- Mayo Clinic, Women’s Urinary Health ২০২৫
- ICDDR,B নারী স্বাস্থ্য রিপোর্ট, বাংলাদেশ,
এই উপসর্গগুলো যদি বারবার হয়, তবে অবহেলা না করে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে প্রথমেই ভয় পাবেন না। আমি নিজেও একসময় এই সমস্যায় ভুগেছি, কিন্তু কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলেই আর ওষুধ ছাড়াই সুস্থ হয়েছিলাম। নিচে এমন কিছু কার্যকর উপায় শেয়ার করছি, যা আপনি ঘরে বসেই সহজে করতে পারেন।
✅ ১. পর্যাপ্ত পানি পান (৮-১০ গ্লাস/দিন)
কেন? পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে এবং ইউরিনকে পাতলা করে ফেলে, ফলে জ্বালাপোড়া কমে যায়।
ব্যবহার: প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করুন এবং সারাদিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পরিশ্রুত পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
✅ ২. নারিকেল পানি, বার্লি জল (যবের পানি), ধনিয়া বাটা
নারিকেল পানি: প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইটে ভরপুর। দিনে ১-২ বার খেলে ইউরিন ইনফেকশন দ্রুত কমে।
বার্লি জল: যব সেদ্ধ করে পানি ছেঁকে দিনে ২ বার পান করুন।
ধনিয়া বাটা: ১ চা চামচ ধনিয়া বাটা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে দারুণ কাজ করে।
✅ ৩. মেথি বীজ ভেজানো পানি
ব্যবহার: রাতে ১ চা চামচ মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, সকালে খালি পেটে পানি পান করুন। এটি ইনফেকশন ও ইনফ্লেমেশন কমায়।
✅ ৪. মধু ও তুলসী পাতার রস
ব্যবহার: ৫-৬টি তুলসী পাতা থেঁতো করে ১ চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে একবার খেলে উপকার পাবেন। এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি।
✅ ৫. কালো জিরা ও মধুর মিশ্রণ
ব্যবহার: ১/২ চা চামচ কালো জিরা গুঁড়ো, ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। এটি দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
✅ ৬. টকদই বা প্রোবায়োটিক খাবার
কেন? টকদই ভালো ব্যাকটেরিয়া সরবরাহ করে যা ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক।
ব্যবহার: প্রতিদিন এক বাটি টকদই খাওয়ার অভ্যাস করুন।
🚫 ৭. ঝাল ও প্রসেসড খাবার বাদ দিন
কারণ: এগুলো ইউরিনে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়, যা জ্বালাপোড়া বাড়াতে পারে। বাইরের খাবার, ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত জিনিস এড়িয়ে চলুন।
তথ্যসূত্র:
- Mayo Clinic (Urinary Health Guide 2025)
- ICDDR,B বাংলাদেশ হেলথ বুলেটিন
- ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অভিজ্ঞতা
মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা
মহিলাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা, বিশেষ করে গরমকালে বা মাসিক চলাকালীন সময়ে। আমি আমার এক কাজিনকে জানি. তিনি প্রায়ই এই সমস্যায় ভুগতেন। পরে তিনি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চলায় অনেকটা সেরে উঠেছিলেন।
১. তুলসী পাতার রস ও মধু
সকালে খালি পেটে ৫-৬টি তাজা তুলসী পাতা থেঁতো করে ১ চা চামচ খাঁটি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে শরীরে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাব পড়ে।
২. সিটজ বাথ (Sitz Bath) বেকিং সোডা দিয়ে
হালকা গরম পানিতে ১ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে তাতে ১০–১৫ মিনিট বসে থাকুন। এটি যোনি ও মূত্রনালির ইনফ্লেমেশন প্রশমিত করে এবং জ্বালাপোড়া কমায়।
৩. শুকনো আদা ও গোলমরিচ মিশিয়ে গরম পানি
১ চা চামচ শুকনো আদা গুঁড়ো ও ১/২ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ১ বার পান করুন। এটি ইনফ্লেমেশন কমাতে কার্যকর।
৪. প্রস্রাবের পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোয়া
প্রস্রাব করার পর অবশ্যই সামনের দিকে থেকে পেছনের দিকে ধুতে হবে, তা না হলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।
তথ্যসূত্র:
- Mayo Clinic Women’s UTI Guide 2025
- ICDDR,B নারী স্বাস্থ্য নির্দেশিকা,

ছেলেদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা
ছেলেদের মধ্যে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন বন্ধুর অভিজ্ঞতা জানি, যিনি নিয়মিত পানি কম খেতেন আর বাইরের খাবার খেতেন বেশি, ফলে ইনফেকশন, আর তারপর শুরু হয় প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া। কিন্তু কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললে দ্রুত উপশম পাওয়া সম্ভব।
১. পানি ও তরল গ্রহণ বাড়ানো
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পরিশ্রুত পানি পান করা উচিত। পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিয়ে মূত্রনালির সংক্রমণ কমায়।
২. লেবু পানি (দুধ-চিনি ছাড়া)
লেবুতে ভিটামিন C ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। দিনে ১-২ বার লেবু পানি পান করতে পারেন।
ব্যবহার: হালকা গরম পানিতে ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
৩. যবের পানি (বার্লি ওয়াটার)
যাদের কিডনি বা প্রস্রাবে পাথরের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য বার্লি পানি খুবই উপকারী। এটি প্রস্রাব সহজ করে এবং পাথরের ঝুঁকি কমায়।
ব্যবহার: ১ কাপ যব ফুটিয়ে ছেঁকে নেওয়া পানি দিনে ২ বার পান করুন।
৪. বাইরের ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন
এসব খাবার শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়, যা প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া তৈরি করে।
তথ্যসূত্র:
- Mayo Clinic Urinary Health for Men (2025)
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) স্বাস্থ্য পরামর্শ,
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া দূর করার ঔষধ
Disclaimer: এই ওষুধগুলো নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘরোয়া চিকিৎসা উপকারী হলেও সংক্রমণ থাকলে সঠিক ওষুধ প্রয়োজন।
আমি নিজেই একবার এই সমস্যায় পড়েছিলাম। দিনে একবার প্রস্রাব করতে গিয়ে অসম্ভব জ্বালা আর চাপ অনুভব করছিলাম। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধে দ্রুত উপশম পাই।
ইউরিলাক্স সিরাপ (Urilax)
বাংলাদেশে বেশ পরিচিত একটি সিরাপ যা প্রস্রাবে আরাম দেয়। দিনে ২ বার ২ চা চামচ করে খেতে হয় (চিকিৎসক অনুযায়ী ডোজ ঠিক করুন)।
অ্যাজিথ্রোমাইসিন / সিপ্রোফ্লক্সাসিন
ইউরিন ইনফেকশনের ক্ষেত্রে চিকিৎসক সাধারণত এই অ্যান্টিবায়োটিক দেন। নিজে থেকে না নিয়ে ডাক্তারি পরামর্শে গ্রহণ করাই ভালো।
প্যারাসিটামল
যদি ব্যথা বা জ্বর থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। এটি উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
স্থানীয় ফার্মেসিতে পাওয়া যায় এমন OTC ওষুধ:
- Amdocal (অ্যান্টিবায়োটিক নয়, কিন্তু ডাক্তার দিলে)
- Urical (ইউরিনারি অ্যাসিড দূর করে)
- Buscopan (পেশির টান কমায়, চিকিৎসকের মতে ব্যবহারযোগ্য)
তথ্যসূত্র:
- [BSMMU Men’s UTI Guide ২০২৪]
- Mayo Clinic Urology Update, ২০২৫৯.
কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি ?
যদি মূত্রনালীর জ্বালা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে বিলম্ব না করে ডাক্তারের সাথে দেখা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সংক্রমণ বা অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে।
যদি প্রস্রাবের সময় রক্তপাত হয় বা প্রস্রাবে রক্তপাত হয়, তবে এটিও উদ্বেগের কারণ। এটি মূত্রনালীর একটি গুরুতর সমস্যা বা পাথরের ইঙ্গিত দিতে পারে।
যদি তীব্র ব্যথা, উচ্চ জ্বর, বা ঠান্ডা লাগা দেখা দেয়, তাহলে আপনার অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এগুলি সংক্রমণের লক্ষণ।
বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগে ভুগছেন তাদের জন্য, মূত্রনালীর সমস্যার জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসার পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
স্ব-ঔষধের চেয়ে সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা অনেক বেশি কার্যকর।
তথ্যসূত্র:
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) ২০২৪
- Mayo Clinic Urinary Health Guidelines ২০২৫

প্রতিরোধ ও সঠিক স্বাস্থ্যচর্চা
মূত্রনালীর জ্বালাপোড়া এড়াতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং মূত্রনালীর পরিষ্কার রাখে।
যৌন স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যৌন মিলনের পর সঠিক পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রস্রাব আটকে রাখাও ক্ষতিকর, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্রাব করা উচিত।
প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে তুলসী পাতা এবং মধু নিয়মিত গ্রহণ মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও, দই বা প্রোবায়োটিক খাবার পেটের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস যেমন কম মশলাদার এবং তৈলাক্ত খাবার খাওয়া, পরিমিত ব্যায়াম করা এবং মানসিক চাপ কমানো, এই সবই স্বাস্থ্যকর প্রস্রাবকে সহজ করে তোলে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতায়, আমি দেখেছি যে নিয়মিত পানি পান করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা মূত্রনালীর অনেক সমস্যা দূর করে।
তথ্যসূত্র:
- বাংলাদেশ স্বাস্থ্য পরিষেবা (DGHS) ২০২৫
- Mayo Clinic, Urinary Health, ২০২৫
উপসংহার
মূত্রনালীর জ্বালাপোড়া কখনই উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয়। সময়মতো চিকিৎসা না করালে ছোটখাটো সমস্যাও বড় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ঘরোয়া প্রতিকার অনেক ক্ষেত্রেই সহায়ক, তবে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে এই সমস্যার পুনরাবৃত্তি অনেকাংশে রোধ করা যেতে পারে। আজ থেকেই আপনার দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তন করে আপনার স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করুন, যাতে আপনি জ্বালাপোড়া থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
তথ্যসূত্র:
- বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (DGHS), ২০২৫
- Mayo Clinic, Urinary Health Guide, ২০২৫