ভূমিকা: চোখ উঠা – আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি
আমি প্রথমবার যখন চোখ ওঠায় ভুগি, তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম। চোখ লাল, চুলকানি, পানি পড়ছে—মনে হচ্ছিল এটা বুঝি বড় কোনও অসুখ। আশেপাশের সবাই দূরে সরে যাচ্ছিল। মা তো তোয়ালে আলাদা করে রাখলেন, যেন কেউ ছুঁয়েও না ফেলে।
এই অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি—চোখ উঠা ভয় পাওয়ার কিছু নয়, বরং সচেতনতা থাকলে সহজেই সামাল দেওয়া যায়।
বাংলাদেশে বর্ষাকাল বা ধুলাবালির মৌসুমে চোখ ওঠা অনেক সাধারণ একটি সমস্যা। স্কুলপড়ুয়া শিশু থেকে শুরু করে বড়দের মধ্যেও এটি দেখা যায়। সমস্যা হয় তখনই, যখন মানুষ এটিকে ভুলভাবে বোঝে বা ভুল চিকিৎসা করে।
এই লেখায় আমরা জানবো—চোখ উঠার আসল কারণ কী, কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি আর কোন ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো সত্যিই কার্যকর। কারণ, সচেতনতা মানেই সুস্থতা।
চোখ উঠার কারণ
চোখ উঠা যখন হয়, তখন অনেকেই ভাবে এটি হঠাৎ করে হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে এর পেছনে বেশ কিছু স্পষ্ট কারণ থাকে, যেগুলো জানা থাকলে এই অসুবিধা সহজেই এড়ানো যায়।
১. ভাইরাস সংক্রমণ – সবচেয়ে সাধারণ কারণ
আমার নিজের চোখ উঠেছিল একবার বর্ষাকালে। ডাক্তার জানালেন এটা Adenovirus নামের এক ভাইরাসের কারণে হয়েছে। এই ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়ায়, বিশেষ করে যখন কারো সংক্রমিত চোখের পানি বা তোয়ালে ছোঁয়া লাগে।
Herpes simplex নামের আরও একটি ভাইরাস থেকেও চোখে ইনফেকশন হতে পারে, যা একটু জটিল এবং ব্যথাযুক্ত।
🔎 সূত্র: CDC – Conjunctivitis
২. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
ছোট শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। চোখে পুঁজ জমে, অনেক সময় চোখ সকালে আটকে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে Staphylococcus বা Streptococcus ব্যাকটেরিয়া দায়ী থাকে।
৩. ধুলাবালি ও অ্যালার্জি
আমরা যারা ঢাকায় থাকি, জানি কেমন ধুলাবালি ও বায়ু দূষণ। ধুলা বা পরাগ কণা চোখে গেলে অ্যালার্জির মতো প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা চোখ লাল ও জ্বালাপোড়া তৈরি করে।
৪. অপরিষ্কার হাত ও চোখে বারবার ঘষাঘষি
আমি একসময় চিন্তা করতাম, চোখ চুলকালে হাত দিয়ে ঘষলেই আরাম! এখন বুঝি, এই অভ্যাসেই জীবাণু ঢুকে যায় চোখে।
৫. অন্যের তোয়ালে বা বালিশ ব্যবহার
এইটা একদম না করা উচিত। অনেকেই জানে না, চোখ উঠা খুব ছোঁয়াচে, আর এই জিনিসগুলো থেকে সহজেই ছড়ায়।
৬. শিশুদের মধ্যে ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি
স্কুল, খেলার মাঠ, বা টিউশনে – শিশুদের মধ্যে চোখ উঠা দ্রুত ছড়ায়। তারা অনেক সময় বুঝতে পারে না কোনটা ব্যবহার করা নিরাপদ।

চোখ উঠলে করণীয় কি
যখন চোখ ওঠে, তখন আমরা অনেকে ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু ভয় নয়, দরকার সচেতনতা ও কিছু ছোট ছোট অভ্যাসের পরিবর্তন। আমি নিজে যখন চোখ ওঠায় ভুগছিলাম, তখন ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন—“তুমি যদি ছোঁয়াচে না হতে চাও, তাহলে নিয়মগুলো ঠিকভাবে মানো।” সেই অভিজ্ঞতা থেকেই নিচে সহজভাবে গুরুত্বপূর্ণ করণীয়গুলো বলছি।
✅ প্রথমেই আতঙ্ক নয়, সচেতন হোন
চোখ ওঠা সাধারণ সমস্যা। বেশি ভয় পেলে অনেকে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়—যেমন গরম জল, কাঁচা দুধ বা ডিম লাগানো, যা বিপদ ডেকে আনতে পারে।
✅ চোখে হাত দেবেন না
চুলকালেও চোখে হাত দেবেন না। এতে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অভ্যাস করুন।
✅ নিজস্ব তোয়ালে, রুমাল ও বালিশ ব্যবহার করুন
ঘরের অন্য সদস্য যেন আপনার তোয়ালে বা বালিশ ব্যবহার না করে। এতে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
✅ ডাক্তারের পরামর্শ নিন (বিশেষ করে শিশু বা ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে)
যদি চোখে পুঁজ হয়, জ্বালা বাড়ে বা দেখতে ঝাপসা লাগে—তখন দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
✅ আলাদা থাকুন ও ব্যবহার আলাদা করুন
- নিজের কাপড় আলাদা রাখুন
- শিশুকে স্কুলে না পাঠানো ভালো
- অন্যের ব্যবহৃত জিনিস স্পর্শ না করুন
🔎 সূত্র: WHO – Prevention of Eye Infections
চোখ উঠা মানেই পুরো পরিবার আতঙ্কে ভোগে—এই ভয়টা দূর করতে হলে সচেতনতা সবচেয়ে বড় ওষুধ।
চোখ উঠলে কি কি খাওয়া যাবে না
চোখ ওঠা হলে আমাদের দেশে অনেকেই খাওয়ার বিষয়ে নানা রকম “বিধি-নিষেধ” বলে দেন। কেউ বলেন ডিম খাওয়া যাবে না, কেউ বলেন মাছে ছ্যাঁকা পড়ে যাবে। কিন্তু এই ধারণার কতটুকু সত্য? আর কোন খাবারগুলো সত্যিই এড়ানো উচিত?
👉 অতিরিক্ত তেল-মসলা যুক্ত খাবার যেমন—ঝাল ভর্তা, রোস্ট, বা চিকেন বিরিয়ানি—এই সময়ে এড়ানো উচিত। এগুলো শরীরকে আরও গরম করে এবং ইনফ্লেমেশন বাড়াতে পারে।
👉 ঝাল, ডিপ ফ্রাইড খাবার, যেমন—চিপস, ফ্রাইড চিকেন বা সমুচা—চোখের জ্বালা বা চুলকানি বাড়িয়ে দিতে পারে।
👉 ঠান্ডা জাতীয় খাবার—যেমন আইসক্রিম, ঠান্ডা পানি বা কোল্ড ড্রিংক—অনেকের চোখের স্নায়ুতে প্রভাব ফেলে এবং সংক্রমণ বাড়াতে পারে।
🎯 ডিম বা মাছ নিয়ে প্রচলিত ভুল
অনেকে বলেন ডিম বা মাছ খেলে চোখে দাগ পড়ে যায়। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বা বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটি এসবের পক্ষে কোনও প্রমাণ দেয়নি। তবে যদি কারো ডিম বা মাছ খেয়ে অ্যালার্জি হয়, তখন অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত।
✅ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, হালকা, সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত—যেমন ভাত, ডাল, সবজি, ও ফলমূল। এগুলো রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
🔗 সূত্র:
- WHO Eye Infection Nutrition Guide (2025)
- Bangladesh Eye Care Society
চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা
আমার যখন প্রথম চোখ উঠেছিল, আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। চোখ ফুলে গিয়েছিল, পানি পড়ছিল, এবং ব্যথাটাও ছিল অসহ্য। তখন আমার দাদি বললেন, “ঠান্ডা পানিতে চোখ ধুয়ে নে, আর এক কাপড়ে ঠান্ডা সেঁক দে।” আমি করেছিলাম, আর সত্যিই কিছুটা আরাম পেয়েছিলাম।
তবে আজ এত বছর পর বুঝি – ঘরোয়া চিকিৎসা সব সময় কাজ করে না। কারও উপকার হলেও, অন্যের ক্ষতিও হতে পারে। তাই সচেতন থাকা খুব জরুরি।
১. ঠান্ডা পানিতে চোখ ধোয়া (প্রতিদিন ৩–৪ বার)
চোখ ঠান্ডা থাকলে প্রদাহ কমে। পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে। নোংরা পানিতে ইনফেকশন বাড়ে।
২. গোলাপজল বা স্যালাইন ব্যবহার
বিশুদ্ধ গোলাপজল বা টেট্রা আইওন স্যালাইন দিয়ে চোখ ধোয়া যায়। এতে চোখ ঠান্ডা থাকে এবং জীবাণু ধ্বংস হয়। তবে দোকান থেকে কেনার আগে expiry date দেখে নিন।
৩. ঠান্ডা কাপড় বা টাওয়েল দিয়ে কমপ্রেস
পরিষ্কার, নরম কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে চোখে ৫-৭ মিনিট সেঁক দিন। এতে ব্যথা ও ফোলা কিছুটা কমে।
৪. ভেষজ উপায় – সতর্কতার সঙ্গে
- তুলসী পাতা: কিছুজন চোখে তুলসীর জল ফোটানো পানি ব্যবহার করেন। এতে প্রদাহ কমে, তবে খালি চোখে দেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
- নিমপাতা: জীবাণুনাশক হলেও সরাসরি চোখে ব্যবহার করলে চর্মরোগ বা জ্বালাপোড়া বাড়তে পারে।
👉 পরামর্শ: এসব ভেষজ পদ্ধতি প্রয়োগের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের মতামত নিন।
৫. কাঁচা দুধ বা নারিকেল তেল – সত্যি নাকি ভুল?
অনেকে বলেন, কাঁচা দুধ বা নারিকেল তেল দিলে চোখ ভালো হয়। কিন্তু বাস্তবে এসব জিনিস জীবাণুবাহী হতে পারে, যা চোখে বড় ধরনের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। চিকিৎসকরা এগুলোর বিপক্ষে।
৬. কখন ঘরোয়া চিকিৎসা যথেষ্ট নয়
- চোখের ফোলা বা লাল ভাব ২ দিনের বেশি থাকে
- চোখ থেকে পুঁজ বা রক্তপাত হয়
- দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়
এই অবস্থায় আর দেরি না করে চোখের ডাক্তার দেখানো উচিত।
শেষ কথা
আমার দাদির টিপস আমাকে একদিন আরাম দিয়েছিল। কিন্তু আজ আমি সবার কাছে বলব – সতর্ক থাকুন। সবকিছুতেই ঘরোয়া উপায় চলে না। চোখ আমাদের অমূল্য সম্পদ, তাই চিকিৎসা বেছে নিতে হবে বুদ্ধিমত্তা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে।
তথ্যসূত্র:
- বাংলাদেশ চক্ষু বিজ্ঞান সমিতি (2025 আপডেট)
- WHO: Eye Infection Home Treatment Guide (2024)

বাচ্চাদের চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা
আমি যখন প্রথমবার আমার ছেলের চোখ লাল দেখলাম, বুঝতেই পারিনি এটা “চোখ ওঠা”। চোখে পানি, চুলকানি আর সকালে ঘুম ভাঙার পর চোখটা একদম আটকে থাকত। পরে ডাক্তার জানালেন—শিশুদের মধ্যে চোখ ওঠা খুবই সাধারণ, বিশেষ করে প্লে-গ্রুপ বা স্কুলে গেলে। কারণ, ওরা বারবার চোখে হাত দেয়, খেলনা ভাগ করে নেয়, এমনকি না ধুয়ে খাবারও খায়।
তাই ঘরেই কিছু যত্ন নেওয়া জরুরি:
🔹 হালকা লবণাক্ত গরম পানি বা স্যালাইন দিয়ে চোখ ধোয়া
প্রতিদিন কয়েকবার একবারে পরিষ্কার তুলা দিয়ে ধুয়ে দেওয়া যেতে পারে। এটি সংক্রমণ কমায়।
🔹 ঠান্ডা বা গরম কমপ্রেস – কোনটা উপযুক্ত?
যদি চোখ ফুলে থাকে বা ব্যথা করে, তখন হালকা গরম পানির প্যাক সাহায্য করে।
আর যদি শুধু লাল হয়, তবে ঠান্ডা প্যাক আরাম দেয়।
🔹 খাওয়াদাওয়ায় যত্ন নিন
ফলমূল, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: পেয়ারা, কমলা, টমেটো) শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি?
– চোখে অতিরিক্ত ব্যথা বা ফুলে গেলে
– চোখ থেকে পুঁজ পড়লে
– ২-৩ দিনের মধ্যে উন্নতি না হলে
আমার অভিজ্ঞতা বলছে, মা হিসেবে যত্ন আর সচেতনতা সবচেয়ে বড় ওষুধ। তবে নিজের চিকিৎসা নিজে করতে গিয়ে সময় নষ্ট না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, যদি লক্ষণ বেড়ে যায়।
তথ্যসূত্র:
– Mayo Clinic (2025 update): Conjunctivitis in Children
– ICDDR,B Health Guide for Parents – Bangladesh Edition
চোখ ওঠার উপকারিতা – সত্য নাকি মিথ?
বাংলাদেশে অনেক পরিবারে এখনো একটা কথা চালু আছে—“চোখ উঠলে চোখ পরিষ্কার হয়।” কেউ কেউ বলেন, “চোখ উঠলে নাকি চোখ শক্ত হয়।” আমি নিজেও ছোটবেলায় শুনেছি এসব কথা। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে?
সত্যটা হলো—চোখ ওঠা, বা কনজাংকটিভাইটিস, একধরনের সংক্রমণ। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালার্জির কারণে এটি হতে পারে। এবং এটি মোটেও উপকারী কিছু নয়। বরং সময়মতো চিকিৎসা না হলে এই রোগ থেকে চোখের স্থায়ী ক্ষতি বা অন্যান্য জটিলতা তৈরি হতে পারে (সূত্র: Mayo Clinic, 2025)।
এমন ভুল ধারণা সমাজে ছড়িয়ে থাকার কারণে অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা নেন না। এর ফলে সংক্রমণ ছড়ায় পরিবারে, এমনকি স্কুলে-অফিসেও। একবার আমার এক আত্মীয়র ৫ বছরের ছেলের চোখ ওঠে, তাঁরা বলেন, “ভালোই তো, চোখ পরিষ্কার হচ্ছে!” কিন্তু ৩ দিন পর যখন চোখে ব্যথা আর পুঁজ জমে, তখনই দৌড়ে গেলেন ডাক্তার দেখাতে।
তাই মনে রাখুন —
চোখ ওঠার উপকারিতা নেই, বরং সময়মতো যত্ন না নিলে বিপদ বাড়ে। সত্য জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, গুজবে নয়।
রেফারেন্স:
- Mayo Clinic (2025), “Conjunctivitis: Causes and Treatment”
- ICD-11 WHO Classification (2025 Update)
কখন ঘরোয়া চিকিৎসা বাদ দিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন
আমার অভিজ্ঞতায়, চোখ ওঠা বেশিরভাগ সময়ই ঘরোয়া যত্নে সেরে যায়। কিন্তু কিছু কিছু লক্ষণ দেখলে আর দেরি করা একদম ঠিক না।
যেমন ধরুন – চোখের লালচে ভাব যদি ২-৩ দিনের মধ্যে না কমে, কিংবা চোখে যদি হলুদাভ পুঁজ জমে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ইনফেকশন বাড়ছে। সেই সঙ্গে যদি চোখে ব্যথা হয় বা ঝাপসা দেখেন, তাহলে অবহেলা বিপজ্জনক হতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকতে হবে, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। আর ডায়াবেটিস রোগীদের চোখ ওঠা হলে সেটাকে সাধারণ চোখ ওঠা ধরে নেয়া ঠিক নয় – ইনফেকশন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আরও একটা বিষয় – যদি চোখ ওঠা বারবার হয়, তাহলে হয়তো ভেতরে অন্য কোনো সমস্যা আছে যা বারবার চোখে ধরা দিচ্ছে।
এইসব ক্ষেত্রে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ সময়মতো চিকিৎসা না হলে চোখের ক্ষতি স্থায়ীও হতে পারে।
📚 উৎস:
- Mayo Clinic Eye Infections (2025 update)
- বাংলাদেশ চক্ষু বিজ্ঞান সমিতি (BCOS) – ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন ২০২৫

চোখ উঠা প্রতিরোধে দৈনন্দিন অভ্যাস
আমি নিজে চোখ উঠার কষ্ট একবার বুঝেছিলাম যখন এক বন্ধুর তোয়ালে ব্যবহার করেছিলাম। চোখ ফুলে গিয়েছিল, ব্যথাও হচ্ছিল। তখনই বুঝলাম – এই সমস্যাটা খুব সাধারণ হলেও, প্রতিরোধ সহজ কিছু অভ্যাসেই সম্ভব।
প্রথমেই বলি, নিয়মিত হাত ধোয়া সবচেয়ে জরুরি। হাতেই সবচেয়ে বেশি জীবাণু জমে থাকে, আর সেটা চোখে লাগলেই ইনফেকশন হয়। বাইরে থেকে এসে, খাবার খাওয়ার আগে বা চোখে হাত দেয়ার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
নিজের তোয়ালে, রুমাল, মোবাইল, মেকআপ সামগ্রী – এগুলো কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এমনকি ঘরের সদস্যদের সঙ্গেও না। কারণ অনেক সময় চোখে ইনফেকশন থাকলেও তা শুরুতে বোঝা যায় না।
চোখে অহেতুক হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। মাঝে মাঝে আমরা অজান্তেই চোখ ঘষে ফেলি, এটা চোখের জন্য ক্ষতিকর।
শিশুদের এই অভ্যাসগুলো শেখানো খুব দরকার। ওদেরকে যেন বোঝানো হয়, চোখের যত্ন মানেই নিজের যত্ন।
আর যারা বাইরের ধুলাবালিতে চলাফেরা করেন, UV-প্রটেকশন যুক্ত সানগ্লাস ব্যবহার করুন। এতে চোখে ধুলো, ধোঁয়া ও রোদের ক্ষতি কমবে।
তথ্যসূত্র:
- বাংলাদেশ জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট (২০২৫ আপডেট গাইডলাইন)
- Mayo Clinic Preventive Eye Care Tips (2025)
উপসংহার: চোখের যত্নে সচেতনতা ও ভালোবাসা
চোখ উঠা হলে অনেকেই ঘরোয়া চিকিৎসায় ভরসা রাখেন, যা শুরুতে উপকার দিলেও সবসময় কার্যকর নাও হতে পারে। বিশেষ করে যদি সংক্রমণ গুরুতর হয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
আমাদের সমাজে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা আছে – যেমন গরম ভাতের ধোঁয়া চোখে দিলে ভালো হয়, যা অনেক সময় ক্ষতি ডেকে আনে। এসব ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি, পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত যত্ন আর সচেতনতাই চোখ উঠার প্রধান প্রতিরোধ। তাই আসুন, নিজের মতো করে নয় – সঠিক তথ্য জেনে চোখের যত্ন নিই।
নিজের চোখের জন্য সচেতন হোন, কারণ এই ভালোবাসাটাই আপনার পরিবারকেও নিরাপদ রাখবে।
তথ্যসূত্র:
- চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. শামীম আরা, বারডেম হাসপাতাল (২০২৫)
- World Health Organization (WHO) Vision Care Guidelines 2025