National Nutrition Week: বারবার অসুখে পড়ছেন? হাতের নাগালেই ইমিউনিটি বাড়ানোর অব্যর্থ উপায়, জানিয়ে দিলেন পুষ্টিবিদ
স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে বর্তমান দুনিয়ায় নানা ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ঠাণ্ডা-কাশি, ফ্লু, এমনকি অস্থির পরিবেশের কারণে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে থাকে। ফলস্বরূপ, অসুস্থ হওয়া, বারবার সর্দি-কাশি, জ্বরে ভুগে থাকাটাই হয়ে পড়ে স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আপনি জানেন কি, সুস্থ থাকতে এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করা সম্ভব? বিশেষ করে “ন্যাশনাল নিউট্রিশন উইক” বা জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের সময়ে, পুষ্টিবিদরা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি বাড়ানোর কিছু সহজ উপায় শেয়ার করেছেন, যেগুলি সহজেই আপনার ডায়েটের অংশ হতে পারে।
ইমিউন সিস্টেম: শরীরের রক্ষাকারী বাহিনী : National Nutrition Week
ইমিউন সিস্টেম হল শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষার একটি জটিল নেটওয়ার্ক, যা আমাদের শরীরে অনুপ্রবেশকারী ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, পারজাইটস এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদান থেকে রক্ষা করে। এটা যেমন আমাদের শরীরের জন্য সুরক্ষা দেয়, তেমনি স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর যখন এই সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইমিউনিটি বাড়ানোর সহজ উপায়
সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করুন
ইমিউন সিস্টেম সুস্থ রাখতে সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন হয়। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, এবং ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ভিটামিন সি: এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা এবং অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। লেবু, কমলা, আমলকি, টমেটো এবং গাজর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের উদাহরণ।
- -ভিটামিন ডি: এটি শরীরের অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সহায়ক, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, পাশাপাশি ডিম, মাশরুম এবং চিজও এর ভালো উৎস।
- জিঙ্ক: এটি শরীরের কোষের পুনর্গঠন এবং সেলুলার ফাংশন সমর্থন করে। পুষ্টিবিদরা বলেন, অঙ্কুরিত দানা, সীফুড, মাংস এবং শিমে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে।
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে রসুন ব্যবহার করুন
রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন নামক একটি উপাদান, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। রসুন খেলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় এবং শরীরের নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়া ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে।
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন
পানি শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়ক, এবং এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। সঠিক পরিমাণে পানি পান করার ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে এবং ইমিউন সিস্টেম কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়া, লেবু পানি বা হালকা চা (যেমন আদা বা তুলসি চা) খাওয়া শরীরকে রিফ্রেশ রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ব্যালেন্সড ডায়েট গ্রহণ করুন
বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি, প্রোটিন এবং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের মিশ্রণ আপনাকে একটি ব্যালেন্সড ডায়েট প্রদান করতে পারে। বিশেষ করে পালং শাক, ব্রোকলি, কুমড়া, গাজর, বেদানা, আপেল, কলা এবং ব্লু-বেরি খুবই কার্যকর। এগুলির মধ্যে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এগুলি শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে বিশেষভাবে কার্যকর।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন
বিশ্রামের অভাবে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে শরীর স্বাভাবিকভাবে রিচার্জ হয় এবং ইমিউন সিস্টেম পুনর্গঠিত হয়। পুষ্টিবিদরা জানান, প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম শরীরের স্বাস্থ্য ও ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
স্ট্রেস কমাতে ধ্যান বা যোগব্যায়াম করুন
স্ট্রেস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এই কারণে, ধ্যান, প্রানায়াম বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে শরীরের কোষগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী থাকে।
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ বা ব্যায়াম করুন
বায়ালজিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়ক। ব্যায়াম শরীরের কোষগুলিকে সক্রিয় রাখে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো বা ইয়োগা করা শরীরকে সুস্থ রাখে এবং ইমিউন সিস্টেমকে কার্যকর করে।
প্রোবায়োটিক খাদ্য গ্রহণ করুন
প্রোবায়োটিক খাদ্য যেমন দই, কিমচি, কাবাচ, মিসো ইত্যাদি পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং ইমিউন সিস্টেমও শক্তিশালী করে। প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া শরীরের অন্ত্রের ফ্লোরাকে সুস্থ রাখে এবং শরীরের অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি বাড়ায়।
অ্যালকোহল ও সিগারেট এড়িয়ে চলুন
অ্যালকোহল এবং সিগারেট শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলি ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা তৈরি করে এবং সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। তাই এই সব ক্ষতিকারক অভ্যাস থেকে দূরে থাকাই স্বাস্থ্যকর।
উপসংহার : এখন আপনি জানেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সঠিক পুষ্টি, প্রাকৃতিক উপাদান, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। ন্যাশনাল নিউট্রিশন উইক উপলক্ষে, এই সহজ কিন্তু কার্যকর পদ্ধতিগুলি জীবনযাপনে অন্তর্ভুক্ত করে আপনি সুস্থ, শক্তিশালী এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। তাই আজ থেকেই আপনার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন শুরু করুন এবং শরীরকে রক্ষা করতে শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম গড়ে তুলুন।